ভিটামিন pdf || Vitamin pdf
খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন(Vitamin):-
বিজ্ঞানী ক্যাসিমির ফাঙ্ক (C. Funk) 1912 সালে ‘ভিটামাইন’ নামকরণটি করেন। সব ভিটামাইনে অ্যামাইনো অনুপস্থিত হওয়ায় 1919-1920 সালে বিজ্ঞানী ড্রমন্ড ভিটামাইনকে বলেন ভিটামিন।
ভিটামিনের বৈশিষ্ট্য:-
1. ভিটামিন এক প্রকারের জৈব অনুঘটক এবং বিপাককার্যে উৎসেচকের সঙ্গে কো এনজাইম হিসেবে কাজ করে।
2. সাধারণ খাদ্যে ভিটামিন খুব অল্প পরিমাণে পাওয়া যায় এবং জীবদেহে খুব অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হতো।
3. ভিটামিন মূলত উদ্ভিদদেহে সৃষ্টি হয়। তবে A, B12 ও D ভিটামিনগুলি প্রাণীদেহেও সৃষ্টি হয়। যেমন, ভিটামিন D সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির দ্বারা ত্বকের আর্গোস্টেরল থেকে, লিভারের ক্যারোটিন থেকে ভিটামিন A এবং অন্ত্রে জীবাণুর দ্বারা ভিটামিন B12 সৃষ্টি হয়। ইঁদুরের অ্যাড্রিনাল কটেক্স এ তৈরি হয়।
4. বেশিরভাগ ভিটামিনকেই কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যায়।
5. ভিটামিন খুবই অল্পমাত্রায় দেহে সঞ্চিত হয়।
6. দ্রাব্যতার উপর নির্ভর করে ভিটামিন দুই প্রকার। যথা-
a) জলে দ্রবনীয় ভিটামিন(Water Soluble Vitamin):- B Complex, C, P।
b) ফ্যাটে দ্রবণীয় ভিটামিন(Fat Soluble Vitamin):- A,D,E,K ।
বিভিন্ন ভিটামিনের নাম,উৎস, অভাবজনিত লক্ষণ, শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পর্কে আলোচিত করা হলো।
1. ভিটামিন A (রেটিনল):
• উৎস:- দুধ, ডিম, হ্যালিবট, কড হাঙ্গর মাছের তেল, গাজর, টমেটো, সবুজ শাকসবজি, পাকা , পাকা পেঁপে ইত্যাদি।
• অভাবজনিত লক্ষণ:- রাতকানা রোগ হয়। চোখে ছানি পড়ে, গ্রন্থির ক্ষতি হয়, ত্বক খসখসে হয় এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
• শারীরবৃত্তীয় কাজ:- অশ্রুরোগ প্রতিরোধ, দেহের বৃদ্ধি, চক্ষুর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি, পেশির গঠন ও কার্য নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।
2. ভিটামিন B কমপ্লেক্স
2a) Vit B1 (থিয়োমিন):
• উৎস:- ঢেঁকিছাটা চাল, দানাশস্যের খোসা, ডিমের কুসুম, ডাল, বিন, ফুলকপি, অঙ্কুরিত বীজ, মাছ, মাংস, দুধ, মাখন ইত্যাদি।
• অভাবজনিত লক্ষণ:- বেরিবেরি রোগ হয়, হাত পা ফোলা, খুদা মান্দ্য, স্নায়ুদৌর্বল্য, হৃদপিন্ডের দুর্বলতা।
• শারীরবৃত্তীয় কাজ:- কার্বোহাইড্রেট বিপাক, কলাকোষ ও মস্তিষ্কের শর্করার জারণ, প্রোটিন, স্নেহ পদার্থ ও কার্বোহাইড্রেট।
2b) Vit B2 (রাইবোফ্লাভিন বা ল্যাক্টোফ্ল্যাভিন):
• উৎস:- ডিমের সাদা অংশ, ইক্ষু, দুধ, অঙ্কুরিত গম, ছোলা, পালং ইত্যাদি।
• অভাবজনিত লক্ষণ:- ঠোঁটের কোণে ঘা হয়, স্নায়ুতন্ত্র, চক্ষু, ত্বক ইতাদের ক্ষয়, চুল ওঠা, মুখ ও জিভে ঘা।
• শারীরবৃত্তীয় কাজ:- কোষীয় শ্বসন, চর্মের সুস্থতা রক্ষা, দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি।
2c) Vit B3 (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড):
• উৎস:- ডিমের সাদা অংশ, বৃক্ক, যকৃত, রাঙা আল, মটর ইত্যাদি।
• অভাবজনিত লক্ষণ:- পেশিতে টান, স্নায়ুক্ষয়, ক্লান্তি, পাখির পেরোসিস রোগ, ইঁদুর ও মুরগির ডার্মাটাইটিস রোগ।
• শারীরবৃত্তীয় কাজ:- ত্বকের নমনীয়তা রক্ষা, দেহের পুষ্টি ও সার্বিক বৃদ্ধি, বিপাকক্রিয়ায় সাহায্য।
2d) Vit G (নিয়াসিন বা নিকোটিনিক অ্যাসিড):
• উৎস:- দানাশস্যের খোসা, মটর, টম্যাটো, মাছ, মাংস, দুধ, যকৃত ইত্যাদি।
• অভাবজনিত লক্ষণ:- পেলেগ্রা রোগ হয়, ত্বক খসখসে, স্নায়দৌর্বল্য, রক্তাল্পতা, ওজন ও কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।
• শারীরবৃত্তীয় কাজ:- একে বলা হয় pp factor(পেলেগ্রা প্রতিরোধী ফ্যাক্টর), কার্বোহাইড্রেট কে স্নেহপদার্থে রূপান্তর ও বিপাকে সাহায্য করা ।
2e) Vit M (ফোলিক অ্যাসিড):
• উৎস:- সয়াবিন, সবুজ শাকসবজি, যকৃত, বৃক্ক, গম ইত্যাদি।
• অভাবজনিত লক্ষণ:- দেহের বৃদ্ধি, রক্তাল্পতা।
• শারীরবৃত্তীয় কাজ:- DNA ও RBC গঠন।
2f) Vit B6(পাইরিডক্সিন বা ইনোসিটল):
• উৎস:- ইস্ট, মাছ, মাংস, ডিম, অঙ্করিত শস্য, দুধ।
• অভাবজনিত লক্ষণ:- রক্তাল্পতা, স্নায়ুদৌর্বল্য, নিদ্রাল্পতা, জনন ক্ষমতা হ্রাস।
• শারীরবৃত্তীয় কাজ:- হিমোগ্লোবিন সৃষ্টি ও প্রোটিন বিপাক।
2g) Vit B12 (সায়ানোকোবালাসিন):
• উৎস:- স্ট্রেপটোমাইসিস গ্রীশিয়াস নামক ছত্রাক, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ।
• অভাবজনিত লক্ষণ:- রক্তাল্পতা, আন্ত্রিক, মুখ ও জিভে ঘা।
• শারীরবৃত্তীয় কাজ:- নিউক্লিক এসিড ও রক্ত উৎপাদন, দেহের সামগ্রিক বৃদ্ধি।
3. Vit C (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড):
• উৎস:- লেবু, আমলকি, কাঁচালঙ্কা, আনারস।
• অভাবজনিত লক্ষণ:- স্কার্ভি রোগ। দাঁতের গোড়া বা মাড়ি ফোলা, রক্ত পড়া, পুঁজ হওয়া, অস্থি বিকৃতি, জনন ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদ।
• শারীরবৃত্তীয় কাজ:- দাঁত ও অস্থি গঠন, কার্বোহাইড্রেট বিপাক, পাকস্থলী ও রক্তবাহকে সতেজ ও কর্মক্ষম রাখা।
4. Vit D (ক্যালসিফেরল):
• উৎস:- হ্যালিবাট, কড হাঙ্গর মাছের তেল, মানুষের দেহ ত্বক, শাকসবজি।
• অভাবজনিত লক্ষণ:- শিশুর রিকেট ও বড়দের অস্টিওম্যালেসিয়া, অমসৃণ ত্বক, অস্থি ও দাঁতের বিকৃতি।
• শারীরবৃত্তীয় কাজ:- অস্থি ও দন্তের পুষ্টি ও গঠন, ক্ষুদ্রান্তে Ca ও P এর শোষণে সাহায্য করা।
5. Vit E(টোকোফেরল):
• উৎস:- সয়াবিন, ডিমের কুসুম, মাছ, মাংস, শাকসবজি।
• অভাবজনিত লক্ষণ:- বন্ধ্যাত্ব প্রাপ্তি। জনন অঙ্গের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ভ্রুণের অকাল মৃত্যু,অকাল প্রসব।
• শারীরবৃত্তীয় কাজ:- জনন অঙ্গের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, গর্ভধারণ ও প্রসব নিয়ন্ত্রণ।
6. Vit-K (ফাইটোকুইনন):
• উৎস:- বাঁধাকপি, ফুলকপি, পালং, টমেটো, সামুদ্রিক মাছ।
• অভাবজনিত লক্ষণ:- রক্তক্ষরণ ঘটা, রক্ত চলাচল ক্ষমতা হ্রাস।
• শারীরবৃত্তীয় কাজ:- রক্ত তঞ্চনের সাহায্য করা এবং প্রোথ্রম্বিন সৃষ্টি করা।
ভিটামিন C বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড তাপ সহ্য করতে পারে না। তাপ দিলে ভিটামিন C নষ্ট হয়ে যায়।
ভিটামিন সংক্রান্ত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ও তার উদাহরণ:
1.অ্যান্টিভিটামিন(Antivitamin):
ভিটামিন কে নষ্ট করেছে পদার্থ তাকে বলে অ্যান্টিভিটামিন। যেমন- B1 এর অ্যান্টিভিটামিন হল পাইরিথিয়ামিন এবং অক্সিথিয়ামিন। B2 এর অ্যান্টিভিটামিন হল গ্যালাকটোফ্ল্যাভিন। বায়োটিন (ভিটামিন P), ভিটামিন M, ও পাইরিডক্সিনের অ্যান্টিভিটামিন হলো যথাক্রমে অ্যাভিডিন, অ্যামাইনোপটেরিন, আইসোনিয়াজিড।
2. প্রোভিটামিন(Provitamin):
প্রোভিটামিন বা আদিভিটামিন হল সেসব পদার্থ যেগুলি থেকে প্রাণীদেহে ভিটামিন তৈরি হয়। যেমন-ক্যারোটিন ও আর্গোস্টেরল। এই দুটি পদার্থ থেকে যথাক্রমে ভিটামিন A ও D সৃষ্টি হয়।
3. সিউডোভিটামিন (Pseudovitamin):
যেসব পদার্থের গঠন ভিটামিনের ন্যায় কিন্তু কাজ নয় তাকে সিউডো বা ছদ্ম ভিটামিন বলে। যেমন- মিথাইল কোবালামিন হল ভিটামিন B12 বা সায়ানো কোবালামিনের সিউডো।
4. অ্যাভিটামিনোসিস, হাইপোভিটামিনোসিস ও হাইপারভিটামিনোসিস:
দেহে ভিটামিনের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি, প্রয়োজনের তুলনায় অল্প উপস্থিতি এবং প্রয়োজনের উপস্থিতিকে বলা হয় যথাক্রমে অ্যাভিটামিনোসিস, হাইপোভিটামিনোসিস এবং হাইপারভিটামিনোসিস।
♦নীচে pdf এর লিংক টি শেয়ার করা হল♦
- File Name:- জেনারেল নলেজ প্রশ্ন উত্তর
- No. of Page:- 5
- Location:- Google Drive
- Download now:- [Download Here]