ওজোন স্তর কি ওজোন স্তর ধ্বংসের কারণ কি || The Cause of Ozone Hole
The Cause of Ozone Hole: আজ ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রপিক ওজোন স্তর সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। যেমন- ওজোন স্তর কি? ওজোন স্তর বিনাশের কারণ কি?
ওজোন স্তর:
ওজন হল হালকা নীলাভ আঁশটে গন্ধযুক্ত গ্যাস। এর রাসায়নিক সংকেত O3 । স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নিম্ন স্তরে ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৫-৩৫ কিলোমিটার উচ্চতায় ওজোন গ্যাসের সর্বাধিক ঘনতযুক্ত স্তরটিকে ওজোন স্তর বা ওজনোস্ফিয়ার বলে।
ওজোন স্তর কিভাবে সৃষ্টি হয়?
উঃ- আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় একটি অক্সিজেন অনু (O2) অতিবেগুনি রশ্মির (UV-B) আঘাতে দুটি অক্সিজেন পরমাণুতে (O+O) বিয়োজিত হয়। অবিয়োজিত অক্সিজেন অনুর (O2) সাথে অক্সিজেন পরমাণুর রাসায়নিক সংযোগের ফলে সৃষ্টি হয় একটি ওজন অনু (O3)। O2 + O=O3 । এই ওজন অনুর সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছে ওজোন স্তর।
• ১৮৪০ সালে বায়ুমন্ডলে এই গ্যাসের অস্তিত্বের কথা প্রথম বলেন সুইজারল্যান্ডের রসায়নবিদ স্কোনবি। ১৯১৩ সালে ফ্রান্সের দুই বিজ্ঞানী হেনরি বুশন এবং চার্লস ফেব্রি বায়ুমন্ডলে ওজোন স্তরের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন।
ওজোন স্তরের গুরুত্ব:
১) ওজন স্তর ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি (৯৭-৯৯%) শোষণ করে। ২) ছাতার মতো জীবকুলকে রক্ষা করে বলে এই স্তরকে ‘পৃথিবীর প্রাকৃতিক সৌর পর্দা’ বলে। ৩) এই স্তর বায়ুমণ্ডলের নিচের স্তরের তাপমাত্রা কমায়। ৪) ওজোনস্তর বিভিন্ন রোগের হাত থেকে মানবসমাজকে রক্ষা করে। ৫) পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র রক্ষা পায়। ৬) জলবায়ুর ঋণাত্মক পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রভৃতির কুপ্রভাব হ্রাস পায়।
• ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব ডবসন এককে (DU) পরিমাপ করা হয়। বিজ্ঞানী ডবসন আবিষ্কৃত স্পেকট্রোফটোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে এই ঘনত্ব পরিমাপ করা হয়।
ওজোন স্তর ধ্বংসের কারণ কি?
বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী ১৯৭০ সালের পর থেকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মোট ওজনের প্রায় ৪% ধ্বংস হয়েছে। উভয় মেরুর দিকে ধ্বংসের মাত্রা বেশি। ওজোন স্তর বিনাশের কারণগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:-
ক) প্রাকৃতিক কারণ:- ১) অগ্নুৎপাত, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনায় ওজোন স্তর কিছুটা নষ্ট হয়। ২) অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে ওজোন অণু ভেঙে অক্সিজেন অনু ও পরমাণু উৎপন্ন হয়। ৩) প্রতি ১০-১৫ বছর অন্তর সুর্যরশ্মির পরিমাণ বাড়ে। সূর্য থেকে আগত ক্ষুদ্র তরঙ্গ রশ্মির পরিমাণ বাড়লে বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন নাইট্রাস অক্সাইডে পরিণত হয়। নাইট্রাস অক্সাইড রাসায়নিক বিক্রিয়ার সাহায্যে ওজোন স্তর ক্ষয় করে। ৪) মেরু অঞ্চলে, বিশেষত কুমেরু অঞ্চলের ওপর থেকে ওজোন গ্যাস পরিবাহিত হয়ে উপমেরু অঞ্চলে (৬০°-৭০° অক্ষাংশে) সঞ্চিত হয়। এর ফলে কুমিরু অঞ্চলের ওজোন স্তর পাতলা হয়ে ‘ওজোন গহ্বর’ তৈরির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
খ)মনুষ্য সৃষ্ট কারণ:- মানুষের কাজের জন্য সৃষ্টি হওয়া ওজন ধ্বংসকারী গ্যাস গুলি যেমন-ক্লোরোফ্লোরোকার্বন, হ্যালোন, মিথাইল ক্লোরোফর্ম, নাইট্রাস অক্সাইড, সালফেট যৌগ প্রভৃতির মাত্রা অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে ওজন স্তরের বিনাশ ঘটছে।
ওজোন স্তর বিনাশ চলতে থাকলে পৃথিবীতে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বেশি আগমন ঘটতে থাকবে। ফলে প্রাণীদের ত্বকের ক্যান্সার বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির মত ঘটনা ঘটতে থাকবে।
ওজোন গহ্বর কী?
উঃ-স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন স্তরের ২০০ ডবসন ইউনিটের কম ঘনত্ব যুক্ত ওজনে অতিবেগুনি রশ্মির প্রবেশ ঘটে। এই অঞ্চলকে ওজোন গহ্বর বা ওজোন হোল বলে। পৃথিবীর বৃহত্তম ওজোন গহ্বর তৈরি হয়েছে অ্যান্টার্কটিকার সংলগ্ন বায়ুমন্ডলে। আর এখানে প্রথম ওজোন গহ্বর পরিলক্ষিত হয়।