ভাষার বৃত্তি pdf || bengali pedagogy pdf part 2

ভাষার বৃত্তি pdf || bengali pedagogy pdf part 2

প্রিয় বন্ধুরা,

আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম যা আপনাদের আগত পরীক্ষার জন্য খুবই উপকারী হয়ে উঠবে। যারা Primary & Upper Primary Tet এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলেহোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জয়েন হয়ে যান এখানে সিলেবাস অনুযায়ী সমস্ত নোট শেয়ার করা হয়। তাই সময় মত সমস্ত নোট পেতে যুক্ত হয়ে যান।

bengali pedagogy pdf part 2

একজন মানুষের ভাব বা ধারণা অন্য মানুষের কাছে পৌঁছে যায় ভাষার মাধ্যমে। ভাষা তাই যোগাযোগের মাধ্যম। কিন্তু একজন মানুষ অন্য মানুষের সঙ্গে কেন যোগাযোগ করবেন এবং কেন কথা বলবেন? এই কথা বলার নিশ্চয়ই একটা উদ্দেশ্য আছে। ভাষার এ উদ্দেশ্যই ভাষার বৃত্তির।

ভাষার বিভিন্ন বৃত্তি (Different Functions of Language):

ভাষার তিনটি মৌলিক বৃত্তি আছে। সেগুলি হল-

1. তথ্যমূলক(Informative)

2. ভাব প্রকাশমূলক (expressive)

3. নির্দেশমূলক/অনুরোধমূলক (Directive)

নিচে এই তিনটি মৌলিক ব্যক্তির বিষয়ে আলোচনা করা হলো-

1. তথ্যমূলক(Informative): এক্ষেত্রে বক্তা বা লেখক এর নিজস্ব অনুভূতির কোন স্থান নেই। কেবল তথ্য থাকে। জগতের চারপাশের সমস্ত তথ্য-সেটি বিজ্ঞানভিত্তিক অথবা অন্য যেকোনো ঘটনা হতে পারে। যেমন

• ২৫ শে বৈশাখ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন।

• পৃথিবীর তিন ভাগ জল আর একভাগ স্থল।

মনে রাখা দরকার, এই তথ্য ‘ভুল’ হতে পারে, সঠিকও হতে পারে। মিথ্যা হতে পারে আবার সত্যিও হতে পারে।

2. ভাব প্রকাশ মূলক (Expressive): এক্ষেত্রে বক্তা বা লেখকের অনুভূতি, বিশেষ ভঙ্গি প্রকাশ পায় অথবা পাঠক বা শ্রোতার মনে কোন অনুভূতির উদ্রেক হয়।

যেমন- 1. আহা কি দেখিলাম! জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না। 2. হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ূরের মতো নাচেরে।

3. নির্দেশমূলক/অনুরোধ মূলক (Directive): এখানে কোনো তথ্য থাকে না। কেবল নির্দেশ থাকে। যেমন-“অনুগ্রহ করে দরজাটি বন্ধ করো”।

ভাষার অন্য কয়েকটি বৃত্তি (Some Other Functions of Language):

উপরোক্ত মৌলিক ভিত্তিগুলি ছাড়াও ভাষার আরও অনেকগুলি ভিত্তি আছে। সেগুলি হল-

1. তুলনা/পার্থক্য (compare/contrast)

2. প্ররোচনা (persuasion)

3. প্রশ্ন জিজ্ঞাসা (asking questions)

4. পছন্দ/ অপছন্দ জ্ঞাপন (expression of like or dislike)

5. কার্যকারণ সম্পর্ক (causality)

6. সংক্ষিপ্তকরণ(summarisation)

7. পর্যায়ক্রম (sequence)

8. ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলা (prediction)

9. সহমত /মতানৈক্য(agreement/disagreement)

10. শুভেচ্ছা বিনিময়/ পরিচয় (greeting/introduction)

রোমান জ্যাকবসন উল্লিখিত ছয়টি বৃত্তি (Six Functions According to Roman Jakobson)

বিখ্যাত রুশ ভাষাবিজ্ঞানী রোমান জ্যাকবশন ভাষার ছয়টি বৃত্তির উল্লেখ করেছেন, সেগুলি হল-

1. বস্ত/ঘটনার দিক নির্দেশ(referential)

2. উৎসারণমূলক(Emotive)

3. আবেদন-নিবেদনমূলক (conative)

4. সামাজিক (phatic)

5. অধিভাষামূলক(metalingual)

6. কাব্যসুষমাময়(poetic)

1. বস্ত/ঘটনার দিক নির্দেশ(referential):ভাষার এই বৃত্তি সবচাইতে বেশি দেখা যায়। সব ক্ষেত্রে কোন বস্তু বা ঘটনার প্রতি নির্দেশ করা হয়, যেমন- “পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে”।

2. উৎসারণমূলক(Emotive): আপনমনে শব্দ, বাক্য প্রয়োগ করে মনের আবেগ প্রকাশ করা হয়। অনেকটা যেন নিজের সঙ্গে কথা বলা। উপস্থিত কেউ শুনল বা শুনলো না, তা গুরুত্ব পাই না। যেমন- দ্বিতীয় দৃশ্যের ছেলেটি ঘরে বসে খেলা দেখতে দেখতে যে কথাগুলো বলেছে, সেগুলো হাসার উৎসারণমূলক বৃত্তির উদাহরণ।

3. আবেদন/ নির্দেশমূলক(Conative): এক্ষেত্রে বক্তা অন্য কাউকে কোনো নির্দেশ দেয় বা আবেদন জানায়। যেমন– 1. “এদিকে এসো”। 2. “একটু জল দাও”।

4. সামাজিক (Phatic): সামাজিক ক্ষেত্রে মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রাথমিক যোগাযোগের সেতু এটি। কারোর সঙ্গে দেখা হলে যখন কেউ বলেন- “হ্যালো, কেমন আছেন?” অথবা সেলুনে চুল কাটাতে কাটাতে যখন পাশের ভদ্রলোককে উদ্দেশ্য করে কেউ বলেন- “আজ কি রকম গরম পড়েছে, দেখেছেন?” তখন সেই ধরনের উক্তিকে বলে ভাষার সামাজিক বৃত্তি। প্রাথমিক যোগাযোগই বক্তার মূল উউদ্দেশ্য

5. অধিভাষা মূলক (Metalingual): এক্ষেত্রে ভাষা বা ভাষাকেন্দ্রিক যে-কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলা হয়। অর্থাৎ ভাষার জন্যই যখন ভাষা ব্যবহার করা হয়। যেমন- 1. “ভাষার বৃত্তি বলতে কী বোঝো?” 2. “সন্ধি ও সমাসের মধ্যে কোথায় মিল আর কোথায় পার্থক্য আছে বলো”। 3. “বাংলার পাঁচটি উপভাষা আছে”।

6. কাব্যসুষমাময়(Peotic): কবির কবিতা নয়, সাধারণ ভাষার প্রয়োগ যখন কবিতার মত সুন্দর হয়ে ওঠে, তখন তাকে বলে ভাষার কাব্যসুষমাময় বৃত্তি। বাক্যের সাধারণ গঠন প্রকৃতি ভেঙে দিলেই অনেক সময় বা কটি অনেক সুন্দর হয়ে‌ উঠতে পারে। “সত্যকে সহজ ভাবে নাও”- এই বাক্যটিকে একটু পরিবর্তন করে বলা যায়, “সত্যরে লও সহজে”। সে ক্ষেত্রে বাক্যটি অনেক বেশি সুন্দর হয়ে ওঠে। তখন এই বাক্যটিকে বক্তার ব্যক্তিগত অনুভূতির চেয়ে বাক্যের সৌন্দর্য বেশি গুরুত্ব পায়।

শিশু ও ভাষার বৃত্তি(The Children and the Functions of Language):

অনেক ভাষাবিজ্ঞানী ভাষার ভিত্তি সম্পর্কে তাঁদের মতবাদ ব্যক্ত করেছেন। এদের মধ্যে Roman Jakobson এবং Michael A.K. Halliday এর মতবাদ বেশি আলোচিত হয়। Halliday-র মতবাদটি শিশুকেন্দ্রিক। তাঁর মতে, শিশুরা অল্প বয়স থেকে ভাষার বৃত্তিগুলো রপ্ত করতে থাকে। ভাষার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তারা ভাষার বৃত্তিগুলো আয়ত্ত করে, কারণ এর মধ্যে দিয়েই শিশুর চাহিদা পূরণ হয়। ১৯৭৫ সালে Halliday সাতটি ভাষা-বৃত্তির কথা বলেছেন। সেগুলি হল-

1. চাহিদা পূরণমূলক বৃত্তি(Instrumental Function):এক্ষেত্রে শিশু তার প্রাথমিক চাহিদা পূরণের জন্য ভাষা ব্যবহার করে, বিশেষ করে খাদ্য, পানীয় এবং স্বাচ্ছন্দ্যবোধের জন্য। যেমন– 1. “আমাকে জল দাও”। 2. “আমার একটি পড়ার টেবিল চাই”।

2. নিয়ন্ত্রণমূলক বৃত্তি(Regulatory Function): শিশু যখন নিজের ইচ্ছায় অনুযায়ী অন্যের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তখন এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করে। সেটা প্ররোচনামূলক হতে পারে, আধিপত্যমূলক হতে পারে আবার অনুরোধমূলকও হতে পারে। যেমন– 1. “আমার সামনে থেকে এখন যাও”। 2. “মা, কাল কিন্তু তুমি অফিসে যাবে না”। 3. “আমাকে বইটা দাও না”।

3. পারস্পরিক সম্পর্কমূলক বৃত্তি(Interactional Function):এক্ষেত্রে শিশু তার পরিবারের অথবা সমাজের অন্য কোনো মানুষের সংস্পর্শে আসতে চায়। যেমন- 1. “মা, আমি তোমায় খুব ভালোবাসি”। 2. “এটা কেবল আমার আর আমার ভাইয়ের জন্য”।

4. আত্মপ্রকাশ মূলক (Inter-personal Function):শিশু যখন নিজের অনুভূতি, নিজের সম্পর্কে কোনো মতামত, অথবা নিজের পরিচিতি প্রকাশ করে, তখন সে এই ভাষা ব্যবহার করে। যেমন- 1. “আমি খুব ভালো দাবা খেলতে পারি”। 2. “আমার মত কেউ দৌড়াতে পারে না”।

5. পরিবেশ জ্ঞান মূলক (Heuristic Function):এই বৃত্তির মধ্য দিয়ে শিশু বাইরের পরিবেশকে নিজের কাছে অনুমোদন করতে চায়। জগতের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সে জ্ঞান অর্জন করতে চায়। যেমন- 1. “চন্দ্রগ্রহণ কি?” 2. “রাতের বেলা সূর্য কেন দেখা যায় না?”

6. কল্পনা মূলক(Imaginative Function):এই ধরনের ভাষা ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শিশুর কল্পনা প্রবণ মনের পরিচয় পাওয়া যায়। গল্প বলতে বা কোনো কাল্পনিক কথা বলতে শিশু এই পাশে ব্যবহার করে। যেমন- 1. “এক দেশে এক রাজা ছিল। তার সাতটি রানী ছিল”। 2. “ওই আমগাছটায় ব্রহ্মদত্যি থাকে”।

7. বর্ণনামূলক(Representational Function):এখানে কোনো ঘটনা বা তথ্যের বর্ণনা থাকে। যেমন- 1. “আজ সকাল থেকে বৃষ্টি পড়ছে”। 2. “বিকেলে আমরা মেলা দেখতে যাব”।

জন্মের পর শিশু স্বাভাবিকভাবেই তার মাতৃভাষা রপ্ত করে, নিজের প্রয়োজন বা চাহিদা পূরণের জন্যই সে ভাষা ব্যবহার করে। সে মায়ের কোল চায়- কারণ ওটা তার প্রয়োজন; সে খাদ্য চায়, সে জগতের সবকিছুকে জানতে চায়-কারণ ওগুলো তার প্রয়োজন। অর্থাৎ শিশুও একটি উদ্দেশ্য নিয়েই ভাষা ব্যবহার করে। ভাষার এই উদ্দেশ্যই ভাষার বৃত্তি। স্বাভাবিকভাবে শিশুর ভাষা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সে ভাষার প্রাথমিক বৃত্তিগুলো রপ্ত করে। এই কারণেই বলা হয়, ভাষার বৃত্তি আসলে শিশুর প্রয়োজন বা চাহিদা পূরণের হাতিয়ার।

শিক্ষকের কাজ (The Duty of a Teacher):

ভাষা শিক্ষকের অন্যতম প্রধান কাজ শিক্ষার্থীকে এমন একটি যন্ত্র দেওয়া, যার দ্বারা সে সার্থকভাবে ভাষা প্রয়োগ করতে পারে। এই কারণেই ভাষার বৃত্তিগুলোর সঙ্গে শিক্ষার্থীর পরিচয় করানো জরুরী। অল্প বয়স থেকেই শিশু ভাষার প্রাথমিক বৃত্তিগুলো রপ্ত করতে শেখে। কিন্তু বৃহত্তর সামাজিক জীবনে ভাষার বিভিন্ন বৃত্তিগুলো যদি সে না জানে, তাহলে সঠিক ও সুন্দরভাবে ভাষা ব্যবহার করতে পারবে না।

একজন শিক্ষকের প্রধান কাজ হল সেই সমস্ত শব্দ বা শব্দগুচ্ছ এর সঙ্গে শিক্ষার্থীর পরিচয় করানো, যেগুলো ভাষার বৃত্তির সঙ্গে যুক্ত।

ভাষাবিজ্ঞানী Krashen এবং Terrel ভাষার বৃত্তি শিক্ষণের ক্ষেত্রে বিষয় নির্বাচন এবং পরিস্থিতির কথা বলেন। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক একটি বিষয় নির্বাচন করবেন ও বিষয় অনুযায়ী পরিস্থিতি তৈরি করবেন। বিষয়টি বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন হতে পারে বা প্রথম দৃশ্যে বর্ণিত একটি বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানও হতে পারে। শিক্ষক নকল পরিস্থিতি তৈরি করে বিষয় অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক বৃত্তিগুলো শেখাবেন। শিক্ষক এ বিষয়ে সচেতন থাকবেন যে, ভাষার কোন একটা নির্দিষ্ট বৃত্তির একাধিক পথ আছে। একজন বয়স্ক মহিলাকে শুভেচ্ছা জানানো ও বাড়িতে সমবয়সী বন্ধুকে শুভেচ্ছা জানানো এক জিনিস নয়। কাকে কোন ধরনের শুভেচ্ছা জানানো হবে, তা শেখানো শিক্ষকের কাজ।

তবে একথা ঠিক যে, তাত্ত্বিকভাবে ভাষার বৃত্তিগুলো শেখানোর চাইতে বিষয় নির্বাচন ও পরিস্থিতি তৈরি করে ভাষার বৃত্তি শেখানো অনেক বেশি কার্যকরী।

        ⇐নীচে pdf টি শেয়ার করা হল⇒

  • File Name:- ভাষার বৃত্তি
  • No.of Page:- 5
  • Location:- Google Drive
  • Download Link:- [Download]

 

 

 

Leave a comment