Classification of Crops || ফসলের শ্রেণীবিভাগ, খারিফ শস্য ও রবি শস্যের মধ্যে পার্থক্য

Classification of Crops || ফসলের শ্রেণীবিভাগ, খারিফ শস্য ও রবি শস্যের মধ্যে পার্থক্য

Classification of Crops

ফসলের শ্রেণীবিভাগ:

প্রকৃতি অনুযায়ী ফসলের শ্রেণি গুলি হল-

১) খাদ্য ফসল: খাদ্য রূপে ব্যবহার করার জন্য উৎপাদিত ফসলকে খাদ্য ফসল বলে।

উদাহরণ:- ধান, গম, ভুট্টা, মিলেট প্রকৃতি।

বৈশিষ্ট্য: ১) উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রাচীন ও সহজ। ২) চাহিদার তুলনায় বেশি উৎপাদন হওয়ায় দাম কম। ৩) খাদ্য রূপে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ফসল উৎপাদন করা হয়।

২) তন্তু ফসল:- আঁশ বা তন্তু সংগ্রহের উদ্দেশ্যে উৎপন্ন ফসলকে তন্তু ফসল বলে।

উদাহরণ:- পাট, কার্পাস ইত্যাদি।

বৈশিষ্ট্য:-১) আঁশ বা তন্তু সংগ্রহ করা হয়। ২) কান্ডের আঁশ থেকে পাট বীজ থেকে তুলো সংগ্রহ করা হয়। ৩) রপ্তানির উদ্দেশ্যে উৎপাদন করা হয়।

৩) বাগিচা ফসল: ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় মন্ডলের দেশে বিদেশ থেকে আমদানি করা চারা, প্রযুক্তি ও মূলধনের সহযোগিতায় রপ্তানির উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিকভাবে উৎপন্ন ফসলকে বাগিচা ফসল বলে।

উদাহরণ:- চা, কফি, রবার, বিভিন্ন প্রকার মশলা।

বৈশিষ্ট্য:- ১) পুরোপুরি রপ্তানি নির্ভর। ২) কৃষিজাত দ্রব্য প্রক্রিয়াকরণ করার পর রপ্তানি করা হয়। ৩) উৎপাদন শুরুর সময় বেশি মূলধন বিনিয়োগের দ্বারা এই ফসলের চাষ হয়। ৪) রপ্তানি নির্ভর বলে উৎপাদিত ফসলের গুণমান ভালো হয়।

৪) অন্যান্য ফসল: বাজারে বিক্রির জন্য অর্থকরী ফসল রূপে সবজি, ফল, ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষকে হর্টিকালচার বা ট্রাক ফার্মিং বলে। এসকল ফসল অন্যান্য ফসলের অন্তর্গত। হর্টিকালচার বা ট্রাকফার্মিং এর ভিন্ন নাম গুলি হল- ওলেরিকালচার(শাকসবজি চাষ), ফ্লোরিকালচার(ফুলের চাষ), পোমামকালচার(ফলের চাষ)।

উৎপাদনের মরশুম অনুযায়ী ভারতীয় ফসল কে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- ১) খারিফ শস্য, ২) রবি শস্য, ৩) জায়িদ শস্য।

১) খারিফ শস্য: মৌসুমি বায়ুর আগমনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ভারতে উৎপন্ন শস্যকে খারিফ শস্য বলে।

উদাহরণ:- আমন ধান, ভুট্টা, বাজরা, বাদাম, কার্পাস, আখ, ডাল প্রভৃতি।

বৈশিষ্ট্য:- ১) জুন-জুলাই মাসে বপন হয় এবং বর্ষার শেষে অক্টোবর নভেম্বর মাসে ফসল তোলা হয়। ২) মৌসুমী বৃষ্টি নির্ভর হওয়ায় বৃষ্টির অর নিশ্চয়তায় কৃষি উৎপাদন প্রায় ব্যাহত হয়। ৩) এই ফসলের উৎপাদনে প্রাচীন পদ্ধতি ও বীজ ব্যবহার করা হয়। ৪) হেক্টর প্রতি উৎপাদন কম।

২) রবিশস্য: মৌসুমী বায়ুর প্রত্যাগমনের সময় ভারতে উৎপন্ন শস্যকে রবিশস্য বলে।

উদাহরণ:- গম, বোরো ধান, ছোলা, জোয়ার, বিভিন্ন শাকসবজি, আলু, তৈলবীজ প্রভৃতি।

বৈশিষ্ট্য:- ১) অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এই ফসলের বপন শুরু হয় এবং শীতের শেষে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফসল তোলা হয়। ২) রবিশস্য সম্পূর্ণ সেচনির্ভর।

৩)জায়িদ শস্য: ভারতের গ্রীষ্মকালে উৎপন্ন শস্যকে জায়িদ শস্য বলে।

উদাহরণ:- আউস ধান, বাদাম, পাট, শাকসবজি প্রভৃতি।

বৈশিষ্ট্য:- ১) ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে এই ফসলের বপন শুরু হয় এবং মে-জুন মাসে ফসল তোলা হয়। ২) এই ফসলের উৎপাদন কিছুটা জলসেচ ও কিছুটা ঘূর্ণি বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল।

খাদ্য ফসল ও অর্থকরী ফসলের পার্থক্য 

ভিত্তি

খাদ্য ফসল 

অর্থকরী ফসল

উৎপাদন 

উৎপাদন পদ্ধতির প্রাচীন ও সহজ।

উৎপাদন পদ্ধতির নবীন ও বিজ্ঞানভিত্তিক।

চাষের ব্যয় 

খাদ্য ফসল চাষের ব্যয় মাঝারি।

 অর্থকরী ফসল চাষের ব্যয় বেশি।

উদ্দেশ্য 

খাদ্যের জোগান দেয় উদ্বৃত্ত হলে রপ্তানি করা হয়।

রপ্তানির উদ্দেশ্যে চাষ করা হয়।

জমি 

খাদ্য ফসলের জোতগুলি ছোট।

অর্থকরী ফসল বৃহদাকৃতির জোতে চাষ হয়।

গাছের ব্যবহার ও আয়ুষ্কাল

ফসল উৎপাদন হওয়ার পর গাছ মারা যায়।

কখনো কখনো এক বছর বা বহু বছর ধরে ফসল পাওয়া যায়।

খারিফ শস্য ও রবি শস্যের মধ্যে পার্থক্য 

ভিত্তি

খারিফ শস্য 

রবিশস্য

ফলন

জুন-জুলাই মাসে বপন করে অক্টোবর নভেম্বর মাসে ফসল তোলা হয়।

অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বপন করে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফসল তোলা হয়।

উৎপাদন হার

হেক্টর প্রতি উৎপাদন কম হয়।

হেক্টর প্রতি উৎপাদন বেশি হয়।

নির্ভরশীলতা 

বৃষ্টি নির্ভর।

জলসেচ নির্ভর।

মুখ্য ফসল 

আমন ধান, ভুট্টা, বাজরা, বাদাম প্রভৃতি।

গম, বোরো ধান, ছোলা, জোয়ার প্রভৃতি।

 

Leave a comment