Climate of India:এক নজরে দেখে নিন ভারতের জলবায়ু থেকে কী ধরনের প্রশ্ন আসে

Climate of India:এক নজরে দেখে নিন ভারতের জলবায়ু থেকে কী ধরনের প্রশ্ন আসে

Climate of India

ভারতের জলবায়ু:

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ এবং জলবায়ুর অন্যান্য উপাদানের বিভিন্নতার জন্য ভারতের জলবায়ু বৈচিত্র্যপূর্ণ।

ভারতের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য:

ভারতের জলবায়ুতে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য গুলি পরিলক্ষিত হয়।

1. উষ্ণতা: শীতকালীন জানুয়ারি মাসে উত্তর ভারতে চন্ডিগড়ের উষ্ণতার ১৩° সেলসিয়াস। একই সময়ে দক্ষিণ ভারতের কোচির গড় উষ্ণতা থাকে ২৬° সেলসিয়াস। গ্রীষ্মে রাজস্থানের গড় উষ্ণতা প্রায় ৪৮° সেলসিয়াস এবং একই সময়ে কোচির গড় উষ্ণতা ২৮° সেলসিয়াস।

2. বৃষ্টিপাত: বৃষ্টিপাতের পরিমাণ: ভারতের রাজস্থানের বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৫০ সেমির কম। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১,৩৫০ সেমি। বন্টন: ভারতের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১০০-১৫০ সেমি। উত্তর-পূর্ব ভারতের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৩০০-৩৫০ সেমি হলেও উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজস্থানের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৫০ সেমির কম। বৃষ্টিপাতের সময়কাল: ১) সমগ্র ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দ্বারা গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত ঘটে। ২) ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের প্রভাবে কেবলমাত্র উত্তর ভারতে শীতকালে(পশ্চিমী ঝামেলার কারণে) বৃষ্টি হয়। ৩) দক্ষিণ ভারতে গ্রীষ্মকালে বজ্রঝঞ্ঝার প্রভাবে ‘আম্রবৃষ্টি’ হয়। ৫) ভারতে বিকেলবেলায় ‘কালবৈশাখীর’ কারণে বজ্রবিদ্যুসহ ঝড় বৃষ্টি হয়। ৬) শীতকালে তামিলনাড়ুর পূর্ব উপকূলে প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমী বায়ু দ্বারা বৃষ্টিপাত ঘটে।

3. বায়ু প্রবাহ: ১)মৌসুমি বায়ু: সারা ভারতে মার্চ-আগস্ট মাস দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং সেপ্টেম্বর-ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। ২) আঁধি: গ্রীষ্মকালে রাজস্থানের মরুভূমি সংলগ্ন অঞ্চলে বিকেল বেলায় প্রবল ধূলিঝড় আঁধি দেখা যায়। ৩) লু: গ্রীষ্মকালে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের শুষ্ক ও উষ্ণ ‘লু’ বায়ু প্রবাহিত হয়। ৪) সমুদ্র বায়ু ও স্থলবায়ু: ভারতের উপকূল অঞ্চলে দিনের বেলায় সমুদ্র বায়ু ও রাতে স্থলবায়ু প্রবাহিত হয়।

জরুরী তথ্য:

• ভারত ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর দেশ।

• ভারতের উষ্ণতম অঞ্চল রাজস্থানের মরু অঞ্চল(গ্ৰীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা 48° সেলসিয়াস এর বেশি)।

• ভারতের শীতলতম স্থান পশ্চিম লাডাকের ‘দ্রাস’ (শীতকালীন উষ্ণতা -৪০° সেলসিয়াস)।

• ভারত তথা পৃথিবীর সর্বাধিক বর্ষণসিক্ত স্থান চেরাপুঞ্জির মৌসিনরাম (বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১৩৫০ সেমি)। মহাবালেশ্বর ভারতের দ্বিতীয় বর্ষণসিক্ত অঞ্চল।

এল নিনো ও লা লিনা কী?

উঃ-এল নিনোর প্রভাবে ভারতবর্ষে স্বল্প বৃষ্টি বা খরা হয় এবং লা নিনার প্রভাবে ভারতবর্ষে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে। সাধারণ অবস্থায় প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বে পেরু ও ইকুয়েডর উপকূল বরাবর দক্ষিণ থেকে উত্তরে শীতল পেরু বা হামবোল্ড স্রোত প্রবাহিত হয়। কোনো কোনো বছর উষ্ণ জলের স্রোত অঞ্চলটিকে ঢেকে ফেলে। প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূল দিয়ে প্রবাহিত এই উষ্ণস্রোতই এল নিনো নামে পরিচিত। আবার কোনো কোনো বছর পেরু, ইকুয়েডর উপকূলের উষ্ণতা সাধারণ অবস্থার চেয়ে বেশ কিছুটা কমে যায়। প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলের উষ্ণতা হ্রাসের ঘটনাকে লা নিনা বলে।

কালবৈশাখী কি?

উঃ-গ্রীষ্মকালের বিকেল বেলায় মাঝে মাঝে পূর্ব ভারত (পশ্চিমবঙ্গ, অসম) ও বাংলাদেশে বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড়, বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি হয়। একে পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় ভাষায় ‘কালবৈশাখী’ বলে। পশ্চিম দিক থেকে এই ঝড় প্রবাহিত হওয়ায় একে ‘Norwester’ বলে। অসমে এই ঝড়ের নাম ‘বরদৈছিলা’।

লু কী?

উঃ-গ্রীষ্মকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজস্থান, গুজরাট, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি স্থানে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে প্রবাহিত উষ্ণ শুষ্ক বায়ুকে স্থানীয় ভাষায় ‘লু’ বলে।

আঁধি কী?

উঃ- গ্রীষ্মকালে রাজস্থানের মরুভূমি অঞ্চলে সৃষ্ট ধূলিঝড়কে স্থানীয় ভাষায় ‘আঁধি’ বলে। মেঘের সৃষ্টি হয় না বলে এই ঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হয় না, শুধু ধুলো ওড়ে। এই ঝড়ের প্রভাবে উষ্ণতা কিছুটা কমে।

আম্রবৃষ্টি কি?

উঃ- ভারতে গ্রীষ্মের প্রথম দিকে কয়েকটি স্থানে স্থানীয় বায়ুপ্রবাহের ফলে সামান্য বৃষ্টি হয়। কালবৈশাখীর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও তার কাছাকাছি অঞ্চলে গড়ে ১৫-৪০ সেমি পর্যন্ত বৃষ্টি হয়। কেরল ও কর্ণাটক উপকূল অঞ্চলে এই বৃষ্টির নাম আম্রবৃষ্টি। এর প্রভাবে ১০-২৫ সেমি পর্যন্ত বৃষ্টি হয়। কর্নাটকে ‘আম্রবৃষ্টি’ চেরিব্লসমস নামে পরিচিত। কারণ এর প্রভাবে কফির ফল বা চেরি পরিপুষ্ট হয়।

আশ্বিনের ঝড় কি?

উঃ-ফিরে যাওয়া মৌসুমী বায়ুর সঙ্গে স্থলভাগের দিকে আসা সামুদ্রিক বায়ুর সংঘর্ষে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। পশ্চিমবঙ্গে এই ঝড় যেহেতু আশ্বিন মাসে দেখা যায়, তাই তা ‘আশ্বিনের ঝড়’ নামে পরিচিত।

পশ্চিমী ঝঞ্ঝা বা পশ্চিমী ঝামেলা কি?

উঃ-শীতকালে ভূমধ্যসাগর থেকে আশা দুর্বল ঘূর্ণবাতের প্রভাবে ভারতের উত্তর-পশ্চিম (পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, জম্মু ও কাশ্মীর) অঞ্চলে মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টিপাত হয় এবং পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত হয়। ইহাই ‘পশ্চিমী ঝঞ্ঝা’ নামে পরিচিত।

তামিলনাড়ু (করমন্ডল) উপকূলে বছরে দুবার বৃষ্টি বর্ষাকাল হয় কেন?

উঃ-তামিলনাড়ু উপকূলে মৌসুমি বায়ু আসার সময় জুন মাসে বৃষ্টি হয়। আবার অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় জলে বাষ্প সংগ্রহ করে। এই বায়ু ফেরেল সূত্র অনুযায়ী ডান দিকে বেঁকে করমন্ডল উপকূলে প্রবেশ করে এবং পূর্বঘাট পর্বতে বাধা পেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়।

ভারতের শীতকাল শুষ্ক কেন?

 উঃ-উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু শীতকালে ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই মৌসুমী বায়ুর উৎপত্তি স্থল মধ্য এশিয়ার বরফাবৃত ভূ-ভাগ হওয়ার কারণে ভারতে শীতকাল শীতল। এই বায়ুর প্রবাহ পথ সাইবেরিয়া ও চীনের স্থলভাগ হওয়ায় বায়ু জলীয় বাষ্পহীন হয়। তাই বৃষ্টিপাত ঘটে না। এই কারণে ভারতে শীতকাল শীতল, কিন্তু শুষ্ক।

 

 

 

Leave a comment