human body parts in bengali pdf || মানব শরীরের অংশ বিস্তারিত pdf

human body parts in bengali pdf || মানব শরীরের অংশ বিস্তারিত pdf

 প্রিয় বন্ধুরা,

আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম ” মানব শরীরের বিভিন্ন অংশ” সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য। এই বিষয়টি সমস্ত চাকরির পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।‌‌‌‌‌‌‌ তাই  আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি পড়ুন এবং pdf টি ডাউনলোড করে নিন।

human body parts

ত্বক:

ত্বক হল আমাদের শরীরের বর্ম। ত্বক শরীরের সমস্ত অঙ্গকে প্রাথমিক আঘাত থেকে রক্ষা করে। ত্বক শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ। জীবাণুর সংক্রমণ থেকে ভেতরের অঙ্গকে রক্ষা করে ত্বক। ত্বক রোম যুক্ত ও রোমবিহীনও হতে পারে। ত্বকের অন্যান্য কাজ হল-তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ভিটামিন D সংশ্লেষণ, জলের অতিরিক্ত নির্গমন রোধ ইত্যাদি।

  ত্বক প্রধানত তিনটি স্তরে বিভক্ত। নিচে স্তরগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো:-

1. এপিডারমিস:

• ত্বকের সর্ববহিস্থ স্তর হলো এপিডারমিস। এটি করতল, পদতল প্রভৃতি অঞ্চলে বেশ পুরু হয়। এতে রক্তবাহ থাকে না।

• এই অংশে কেরাটিনোসাইট, মেলানোসাইট প্রভৃতি কোষ থাকে।

• কেরাটিনোসাইট কোষ কেরাটিন প্রোটিন তৈরি করে। এই প্রোটিন নখ, চুল প্রভৃতির মূল উপাদান।

• মেলানোসাইট কোষ মেলানিন প্রোটিন তৈরি করে। এই প্রোটিনের উপস্থিতিতে চামড়ার বর্ণ গাঢ় হয়। মেলানিন UV রশ্মি শোষণ করে ত্বকের ক্যান্সার প্রতিহত করে।

2. ডারমিস:

• এপিডার্মিসের পরবর্তী পুরু, স্থিতিস্থাপক স্তরটি হল ডারমিস।

• এই স্তরে রক্তবাহ, লসিকাবাহ, স্নায়ু, ঘর্মগ্রন্থী, সিবেসিয়াস গ্রন্থি থাকে।

3. হাইপোডারমিস:

• হাইপোডারমিস স্তরটি, ডারমিসের নিচে অবস্থিত।

• এই স্তরে মেদকোষ(adipocytes) দেখা যায়।

• এই স্তরে মানব দেহের প্রায় ৫০% ফ্যাট সঞ্চিত থাকে।

• হাইপোডারমিস ত্বককে পেশি ও হাড়ের সাথে সংযুক্ত রাখে।

প্রতি বর্গ ইঞ্চি (6.5 cm2) ত্বকে প্রায় 650 টি ঘর্মগ্রন্থী, 20 টি রক্তবাহ, 60,000 মেলানোসাইট এবং 1000 -এরও বেশি স্নায়ুপ্রান্ত থাকে।

ত্বকের বেধ শরীরের সব জায়গায় সমান নয়। হাতের চেটো পায়ের নিচের চামড়া বেশি পুরু। সাধারণভাবে দেখা যায় আমাদের শরীরের সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে গোড়ালিতে, তাই গোড়ালির ত্বক সবচেয়ে পুরু হয়।

ত্বকের কাজ:

1. বাইরের জীবাণুর আক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করা।

2. ত্বকে স্নায়ুপ্রান্ত থাকায় ঠান্ডা, গরম, স্পর্শ, চাপ, কম্পন, আঘাত প্রভৃতি অনুভূতি আমরা বুঝতে পারি।

3. ত্বক শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

4. ত্বক, লিপিড ও জল সঞ্চয় করে। তাছাড়া সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ভিটামিন D সংশ্লেষণ করে।

5. ঘামের সঙ্গে বর্জ্য পদার্থ হিসাবে কিছুটা ইউরিয়া বাইরে বেরিয়ে আসে। তাই ত্বক বর্জ্য পদার্থ নিঃসরণে সহায়তা করে।

চুল:

চুল হলো ত্বকের ডারমিস স্তর থেকে উৎপন্ন, প্রোটিন ঘটিত ফিলামেন্ট। চুলে প্রোটিন হিসেবে কেরাটিন থাকে (প্রধানত আলফা-কেরাটিন)। চুলের বৃদ্ধি ডারমিস স্তরে অবস্থিত হেয়ার ফলিকল (Hair Follicle)থেকে হয়। এই হেয়ার ফলিকলই হল চুলের একমাত্র জীবন্ত অংশ। মেলানিনের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে চুলের বর্ণ কালো, বাদামি বা লাল হয়। মেলানিনের অভাবে চুল সাদা হয়।

চুলের কাজ:

1. চুল তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাণীদের গায়ের রোম শীতকালে শরীর গরম রাখে।

2. কোনো কোনো প্রাণীর রোম প্রাণীকে পরিবেশে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করে।

3. রোম বাইরের আঘাতকে অতি প্রাথমিক স্তরে প্রতিহত করে।

4. রোম আবার বাইরের অনুভূতি কেমন বায়ু প্রবাহ প্রভৃতি গ্রহণ করে। বিড়াল বা বিড়ালের শ্রেণীর প্রাণীদের গোঁফ(whisker) ইন্দ্রিয় হিসেবে কাজ করে।

বিভিন্ন প্রাণীর শিং, গন্ডারের খড়গ, সজারুর কাঁটা প্রভৃতি অঙ্গগুলি চুলের মতোই কেরাটিন প্রোটিন দিয়ে তৈরি। এই সমস্ত বৃদ্ধি গুলি সংশ্লিষ্ট প্রাণীকে আত্মরক্ষায় সাহায্য করে।

নখ:

নখ হলো শিং-এর মতোই এক ধরনের বৃদ্ধি, যা মূলত হাতের ও পায়ের আঙ্গুলে থাকে। গরু, মোষ, ছাগল, ঘোড়া প্রভৃতি জীবের পায়ে থাকা খুরের গঠন উপাদান হল কেরাটিন প্রোটিন।

না, খুর সবই বৃদ্ধি পায়। মানুষের ক্ষেত্রে গড়ে প্রতি মাসে 3 মিলিমিটার করে নখের বৃদ্ধি হয়। অন্যান্য প্রাণীরা তাদের খুর, নখ প্রভৃতির বৃদ্ধিকে শক্ত অমসৃণ জায়গায় ঘসে ঘসে নিয়ন্ত্রণ করে।

রক্তাল্পতার কারণে- নখগুলো ফেটে যায়, নখের মাঝখানটা চামচের মতো হয়ে যায়, নখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়, নখের গোড়ায় ময়লা হলে পেকে পুঁজ হয়ে যায়।

বিড়াল শ্রেণীর প্রাণী (যেমন-বাঘ, সিংহ, চিতা ইইত্যাদি-দের নখ থাবার মধ্যে লুকানো থাকে। তারা প্রয়োজন মতো নখ বের করতে ও লুকিয়ে ফেলতে পারে।

কুকুর শ্রেণীর প্রাণী (যেমন-শিয়াল, হায়না ইত্যাদি)-দের নখ বাইরে বেরিয়ে থাকে। থাবার মধ্যে লুকোনো থাকে না।

বেশিরভাগ পাখির নখ শিকার ধরার জন্য, গাছের ডালে বসার জন্য ছুঁচোলো হয়। পেঁচা, ঈগল প্রভৃতি পাখি শিকারি পাখি হওয়ার জন্য ওদের নখ হুকের মতো বাঁকানো আর ছুঁচোলো হয়।

গরু, ছাগল প্রভৃতি প্রাণীর নখ হেঁটে হেঁটে খাদ্য সংগ্রহ করার জন্য তা খুরে পরিণত হয়েছে।

নখের কাজ:

নখের প্রধান কাজ আঙুলের অগ্রভাগে রক্ষা করা। এছাড়া বাঘ, সিংহ প্রভৃতি প্রাণীর ক্ষেত্রে শিকার করতে সাহায্য করে। হরিণ, গরু, ছাগল, ঘোড়া প্রভৃতি প্রাণীদের ক্ষেত্রে নখের ন্যায় খুর জোরে ছুটতে সাহায্য করে।

অস্থি:

আমাদের শরীর অস্থি বা হাড়ের কাঠামোর উপর রয়েছে। প্রয়োজন অনুসারে হারের আকার ও দৈর্ঘ্য বিভিন্ন রকমের হয়। পোস্টটি খুব শক্ত এক ধরনের যোগ কলা যার ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি। হাড়ের মাঝখানটা ফাঁপা, এর মধ্যে এক প্রকার নরম পদার্থ থাকে যাকে মজ্জা(bone marrow) বলে। মজ্জায় রক্তের লোহিত কণিকা ও শ্বেত কণিকা তৈরি হয়। হাড়ে কোলাজেন নামক প্রোটিন থাকে। এ ছাড়াও হাড়ে স্নায়ু, রক্তবাহ প্রভৃতি থাকে। অস্থির একটি গঠনগত খনিজ উপাদান হলো ক্যালসিয়াম ফসফেট।

জন্মের সময় মানুষের 305টির মতো হাড় থাকে। পরিণত অবস্থায় মানুষের হাড়ের সংখ্যা 206 টি। একটি হাড়ের উদাহরণ হল:-

1. কাঁধ থেকে কনুই পর্যন্ত:  হিউমেরাস।

2. কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত: আলনা ও রেডিয়াস।

3. পিঠের হাড়: স্ক্যাপুলা।

4. মেরুদন্ডের হাড়:  মানুষের মেরুদন্ডের হাড় গুলিকে বলে কশেরুকা। মেরুদন্ড 33 টি ছোট ছোট হাড় নিয়ে তৈরি হয়। দুটি খন্ডের মাঝখান দিয়ে স্নায়ুতন্তু বের হয়েছে। 33টি হাড়কে 5টি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। ঘাড় থেকে প্রথম 7টি কে সারভাইক্যাল(cervical), পরের 12টিকে বলে থোরাসিক (thoracic), তারপরের 5টিকে বলে লাম্বার(lumber), তারপরের 5টি কে বলে স্যাক্রাল(sacral) এবং শেষ 4টি একত্রে যুক্ত হয়ে একটি অস্থি গঠন করে, যাকে বলে কক্সিস(coccyx)।

5. বুকের হাড়:  বুকের হাড় গুলি দিয়ে একটি খাঁচা তৈরি হয় একে থোরাসিক খাঁচা (thoracic cage) বা বক্ষপিঞ্জর বলে। এই হাড়গুলির প্রতিটিকে বলে পর্শুকা বা পঞ্জরাস্থি। মানবদেহে 12 জোড়া পঞ্জরাস্থি থাকে। এই খাঁচার মধ্যে হৃদপিণ্ড ও ফুসফুস থাকে। পর্শুকাগুলি বুকের মাঝখানে একটি চ্যাপ্টা হাড়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এই হাড়টিকে স্টারনাম বলে।

6. কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত: ফিমার।

7. হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত: টিবিয়া ও ফিবিউলা।

8. আঙুলের হাড়: ফ্যালানজেস।

মানুষের সবচেয়ে লম্বায় বড় হাড় হল ফিমার এবং সবচেয়ে ছোট হাড় হল কানের মধ্যে থাকা স্টেপিস। কানের মধ্যে তিনটি হাড় থাকে সেগুলি হল- মেলিয়াস, ইনকাসস্টেপিস। হাঁটুর মাথায় থাকা হাড়ের নাম প্যাটেলা

হাড়ের থেকে নরম কিন্তু পেশির থেকে শক্ত, নমনীয় যে পদার্থ দিয়ে কর্ণছত্র তৈরি হয় তাকে কার্টিলেজ বা তরুনাস্থি বলে। এটি কান,নাক, লম্বা হাড়ের শেষপ্রান্ত, কশেরুকা প্রভৃতি থাকে। তরুণাস্থিতে রক্তবাহ ও স্নায়ুতন্তু থাকে না।

পাশাপাশি দুটি হাড় তন্তুজাতীয় এক ধরনের শক্ত কিন্তু নমনীয় যোগকলা দিয়ে যুক্ত থাকে। একে লিগামেন্ট বলে। এতে কোলাজেন প্রোটিন থাকে।

অস্থিসন্ধি:

দুটি হাড় যেখানে যুক্ত হয়, সেই স্থানকে অস্থিসন্ধি বলে। অস্থিসন্ধি দুই প্রকারের সচল অস্থিসন্ধি ও অচল অস্থিসন্ধি। সচল অস্থিসন্ধি হলো-কনুই, হাঁটু প্রভৃতি এবং অচল অস্থিসন্ধি হলো করোটির হাড় ইত্যাদি। সচলতার প্রকৃতির নিরিখে কয়েকটি বিভিন্ন অস্থিসন্ধি হল- 1) বল ও সকেট অস্থিসন্ধি (কাঁধ ও হিউমেরাসের সন্ধি), 2) কব্জা অস্থিসন্ধি বা হিঞ্জ জয়েন্ট (কনুই ও হাঁটুর অস্থি সন্ধি), 3) পিভটা সন্ধি (ঘাড় ও কশেরুকার সন্ধি), ইত্যাদি। সচল অস্থিসন্ধিতে ঘর্ষণজাত ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য এক ধরনের তৈলাক্ত তরল পদার্থ থাকে যাকে সাইনোভিয়াল তরল বলে।

পেশি:

বেশিরভাগ প্রাণীর শরীর পেশি দিয়ে তৈরি। পেশি পেশিকোশ নির্মিত যোগগোলা দ্বারা গঠিত। কৃষি কোষে অ্যাকটিন ও মায়োসিন নামে প্রোটিন যুক্ত থাকে। আমাদের নড়াচড়ায়, সমস্ত কাজে পেশি সাহায্য করে। শরীরের আন্তরযন্ত্র যাদের নড়াচড়া ও কাজ আমাদের ইচ্ছাধীন নয়, তাদের কাজ ও সম্পন্ন হয় পেশির সাহায্যে। সেই কারণে শরীরের প্রায় সর্বত্র পেশি বর্তমান। মূলত কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটের জারণের ফলে উৎপন্ন শক্তি পেশিকে চালিত করে। মানবদেহে পেশি আছে তিন রকমের। কিছু পেশির নড়াচড়া আমাদের ইচ্ছাধীন, এদের ঐচ্ছিক পেশি বলে। যেমন হাত হাত ও পায়ের পেশি, মুখের পেশি ইত্যাদি। কিছু পেশির নড়াচড়া আমাদের ইচ্ছাধীন নয়, যেমন-পৌষ্টিকতন্ত্রের পেশি আর হৃৎযন্ত্রের পেশি বা হৃদপেশি।পেশি হাড়কে সচল করে। হাড়ের সঙ্গে পেশির সংযোগ কে টেনডন বলে। পেশি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জোড়ায় জোড়ায় থাকে। একটি পেশি যখন কাজ করে অর্থাৎ সংকুচিত হয় তখন তার বিপরীত পেশি প্রসারিত হয়।

হৃদপিণ্ড :

হৃদপিণ্ড পাম্প এর মত কাজ করে সারা শরীরে রক্ত বাহকের সচল রাখে। মানুষসহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী ও পাখিদের হৃদপিণ্ড সবচেয়ে উন্নত। মানুষের হৃদপিণ্ড চারটি প্রকোষ্ঠ নিয়ে তৈরি। উপরে দুটি প্রকোষ্ঠ ও নিচে দুটি প্রকোষ্ঠ থাকে। উপরের প্রকোষ্ঠ দুটিকে অলিন্দ ও নিচের প্রকোষ্ঠ দুটিকে নিলয় বলে। হৃদপিন্ডের দেওয়াল একটি দ্বিপর্দা যুক্ত আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে একে পেরিকার্ডিয়াম বলে। বাইরের দিক থেকে হৃদপিন্ডের দেওয়ালের স্তর তিনটি, যথা- এপিকার্ডিয়াম, মায়োকার্ডিয়াম এবং এন্ডোকার্ডিয়াম। মাঝের স্তর মায়োকারডিয়ামে কার্যকরী হৃদপেশিগুলি থাকে। হৃদপিন্ডের ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝে ত্রিপত্র কপাটিকা বা ট্রাইক্যাসপিড ভালভ এবং বাম অলিন্দ ও বাম নিলয়ের মাঝে দ্বিপত্র কপাটিকা বা বাইকাসপিড ভালভ বা মিট্রাল ভালভ থাকে। হৃদপিণ্ড বক্ষ গহ্বরে দুটি ফুসফুসের মাঝে, দেহের মধ্যরেখার কিছুটা বাঁদিকে তির্যকভাবে অবস্থান করে।

যখন ডান অলিন্দ শিথিল অবস্থায় থাকে, সারা শরীর থেকে উর্ধ্ব ও নিম্ন মহাশিরা দিয়ে বেশি CO2 মিশ্রিত রক্ত ডান অলিন্দে পৌঁছায়। ডান অলিন্দ পূর্ণ হলে, তা সংকুচিত হয় তখন ত্রিপত্র কপাটিকা খুলে গিয়ে রক্ত ডান নিলয়ে প্রবেশ করে। এই সময় ডান নিলয় শিথিল অবস্থায় থাকে। এরপর ডান নিলয় পূর্ণ হলে তার সংকুচিত হতে শুরু করে। তখন সেই রক্ত ফুসফুসীয় ধমনীর মাধ্যমে দুটি ফুসফুসে যায়। সেখানে সেই রক্ত বায়ু অক্সিজেন গ্রহণ করে বিশুদ্ধ হয় ও শিথিল থাকা অবস্থায় বাম অলিন্দে প্রবেশ করে। এরপর বাম অলিন্দ সংকুচিত হতে শুরু করলে দ্বিপত্র কপাটিকা খুলে গিয়ে রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। বাম নিলয় পূর্ণ হলে তা সংকুচিত হয় তখন সেই বিশুদ্ধ রক্ত মহাধমনি দিয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। বাম নিলয় সমস্ত শরীরের রক্ত পাঠায় বলে এই প্রকোষ্ঠটি সবচেয়ে বড় এবং রক্তচাপও সবচেয়ে বেশি।

হৃদপিন্ডের সংকোচনকে সিস্টোল(systole) এবং প্রসারণ কে ডায়াস্টোল(diastole) বলে। অলিন্দ দুটি একযোগে সংকুচিত হবার সময় নিলয় প্রসারিত হয় এবং নিলয় দুটি একযোগে সংকুচিত হওয়ার সময় অলিন্দ প্রসারিত হয়। নিলয় দুটি সংকুচিত হলে রক্ত একযোগে সারা শরীরে ও ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং অলিন্দ দুটি সংকুচিত হলে রক্ত নিলয় প্রবেশ করে। অলিন্দ ও নিলয়ের মাঝে অলিন্দ-নিলয় ব্যবধায়ক থাকে।

রক্তের স্বাভাবিক চাপ 120/80 mm Hg-এর মধ্যে সিস্টোলিক চাপ 120 mm Hg ও ডায়াস্টোলিক চাপ 80 mm Hg । স্ফিগমোম্যানোমিটার মন্ত্রের সাহায্যে রক্তচাপ দেহের বাইরে থেকে মাপা হয়।

অলিন্দ ও নিলয়ের মাঝে থাকা কপাটিকা ছাড়াও মহাধমনী ও ফুসফুসীয় ধমনীর মুখে একটি করে অর্ধচন্দাকার কপাটিকা থাকে। এই কপাটিকা গুলি নিলয় থেকে রক্তবাহের মধ্যে রক্ত প্রবাহের গতি ও অভিমুখ নিয়ন্ত্রণ করে। হৃদপিন্ডের প্রাচীরগাত্রে হদপেশির যেসব বিশেষ অংশ হৃদস্পন্দন সৃষ্টি করে ও তার পরিবহন করে, তাদের হৃদসন্ধি কলা বলে। এগুলির বিভিন্ন প্রকার হয়।

1. SA (Sinoatrical) নোড: মানুষের হৃদপিন্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীর গাত্রে যেখানে উর্ধ্বমহাশিরা উন্মুক্ত হয়েছে সেখানে সরু দীর্ঘ হৃদপেশীতন্তু দ্বারা গঠিত SA নোড থাকে। এটি হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন ও উদ্দীপনা (70-80 বার প্রতি মিনিটে) সৃষ্টি করে। এজন্য একে স্বাভাবিক ছন্দ নিয়ামক বা natural pace maker বলা হয়।

2. Av (Atrio ventricular) নোড: মানুষের হৃদপিন্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীর অলিন্দ নিলয়ের সংযোগস্থলে, SA নোডের পিছন দিকে হৃদপেশি তন্তু নির্মিত AV নোড থাকে। SA নোড কোনো কারণে হৃদস্পন্দন সৃষ্টি করতে না পারলে AV নোড সেই ভূমিকা পালন করে (40-60 বার প্রতি মিনিটে) ।

3. হিজের বান্ডিল: AV নোডের পিছনদিক থেকে বিচ্ছিন্ন তন্তুময় অংশ রূপে হিজের বান্ডিল উৎপন্ন হয়ে আন্তঃনিলয় হয়ে হৃদপিণ্ডের শীর্ষের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এটি হৃৎস্পন্দন উদ্দীপনাকে নিলয় প্রাচীরে পরিবহন করে। SA ও AV নোড দুজনের কার্যকারিতা ব্যহত হলে হিজের বান্ডিল কিছু মাত্রায় স্পন্দন সৃষ্টি করে(36 বার প্রতি মিনিটে)। হিজের বান্ডিলের শাখা গুলি নিলয়ের প্রাচীরগাত্রে সূক্ষ্মতন্তুর মতো বিস্তৃত হয়। এদের পারকিনজি তন্তু বলা হয়।

SA নোড থেকে ‘হিজের বান্ডিল’ (Bundle of His)-এর সাহায্যে অলিন্দে এবং পারকিনজি তন্তুর সাহায্যে নিলয়ে স্পন্দন ছড়িয়ে পড়ে। SA নোড কাজ না করলে হৃৎস্পন্দন ধীর গতিতে চলতে পারে, যা শরীরের পক্ষে যথেষ্ট নয়। তখন কৃত্রিম পেসমেকার যন্ত্র প্রয়োজন হয়।

মানুষের রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা বাড়লে রক্তবাহের প্রাচীরে জমা হওয়া কোলেস্টেরল, ক্যালশিয়াম, ফ্যাট ইত্যাদি রক্তবাহের অন্তঃস্থ গহ্বরের ব্যাস কমিয়ে দেয়। ফলে রক্তবাহের মধ্য দিয়ে রক্ত পরিবহনের সময় বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এই প্রান্তীয় বাধা বৃদ্ধি পেলে রক্তবাহের মধ্যে রক্তচাপ বেড়ে যায়। এছাড়াও স্থুলতা, ধূমপান প্রভৃতির কারণে রক্তচাপ বেড়ে যায়।

ফুসফুস:

ফুসফুসের সাহায্যে রক্তের মধ্যে O2 মেশে ও রক্ত থেকে CO2 বেরিয়ে যায়। বক্ষগহ্বরে বুকের দুপাশে হৃদপিন্ডের দু’ধারে দুটি ফুসফুস রয়েছে। হৃদপিণ্ডকে জায়গা দেবার জন্য বাম দিকে ফুসফুস আয়তনের ডানদিকে থেকে ছোট। ডান দিকের ফুসফুসে 3টি খন্ড এবং বাম দিকের ফুসফুসে 2টি খণ্ড রয়েছে। প্লুরা নামক দ্বি-স্তরীয় পর্দা দিয়ে ফুসফুস আবৃত থাকে।

নাসারন্ধু দিয়ে আসা বায়ু শ্বাসনালির মাধ্যমে এসে দুটি তালিকায় বিভক্ত হয়ে দুটি ফুসফুসে পৃথকভাবে প্রবেশ করে। এদের ক্লোমশাখা বা ব্রঙ্কাই (একবচনে- ব্রঙ্কাস) বলে। ডান দিকের মুখ্য ক্লোমশাখা তিনটি খন্ডে বিভক্ত হয়ে ডান দিকের ফুসফুসের তিনটি খন্ডে পৃথকভাবে প্রবেশ করে এবং বাম দিকের মুখ্য ক্লোমশাখা দুটি খন্ডে বিভক্ত হয়ে বাম দিকের দুই খন্ড ফুসফুসে প্রবেশ করে। এই গৌন ক্লোমশাখাগুলি অসংখ্য শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়। গুলিকে ব্রঙ্কিওল বা উপক্লোমশাখা বলে। সূক্ষ্ম ব্রঙ্কিওলের শেষ প্রান্ত স্ফীত হয়ে বায়ু থলি বা অ্যালভিওলাসে পরিণত হয়। উপক্লোমশাখাগুলি পেশিকোষ দিয়ে তৈরি হলেও অ্যালভিওলাসের পর্দা পাতলা আবরণী কলা দিয়ে তৈরি হয়। ফুসফুস দুটির মধ্যে থাকা সূক্ষ্ম বায়ু পথের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় 2400 কিমি। ফুসফুসে অ্যালভিওলাই এর সংখ্যা প্রায় 300 মিলিয়ন।

প্রশ্বাসের সময় যে বায়ু ফুসফুস দুটিতে প্রবেশ করে ওই বায়ুপথের মধ্য দিয়ে গিয়ে অ্যালভিওলাসে প্রবেশ করে। অ্যালভিওলাই গুলিকে ঘিরে থাকে বহু সংখ্যক রক্তজালক। যেগুলি অধিক CO2 ও কম O2 মিশ্রিত রক্ত পরিবহন করে। রক্তবাহের মধ্যে CO2 -এর আংশিক চাপ 44mm-Hg ও O2 -এর‌ আংশিক চাপ 40mm-Hg থাকে। অ্যালভিওলাইতে CO2 এর আংশিক চাপ (40mm-Hg) রক্তবাহের চেয়ে কম হয় ও O2 এর আংশিক চাপ(105mm-Hg) রক্তবাহের চেয়ে বেশি হয়। এর ফলে সাধারণ ব্যাপন প্রক্রিয়া CO2 অ্যালভিওলাই থেকে রক্তে মেশে এবং CO2 রক্ত থেকে অ্যালভিওলাইতে প্রবেশ করে। প্রত্যেক প্রশ্বাসের সময় 350 ml শুদ্ধ বায়ু ফুসফুসে প্রবেশ করে ও প্রত্যেক নিঃশ্বাসের সময় সমপরিমাণ বায়ু ফুসফুস থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে। এছাড়া ফুসফুসের স্বাভাবিক ক্রিয়া সম্পাদনের জন্য ফুসফুসের মধ্যের বায়ুপথে প্রায় 2.5 লিটার থেকে 3 লিটার বায়ু থাকে।

শ্বাসকার্যের পদ্ধতি:

মানুষের শ্বাসকার্য দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়- 1. প্রশ্বাস, 2. নিঃশ্বাস।

প্রশাস একটি সক্রিয় প্রক্রিয়া। এই পদ্ধতিতে মধ্যচ্ছদা সংকুচিত হয় ও নিচের দিকে নেমে যায়। অন্তঃপঞ্জরাস্থি পেশিগুলি সংকুচিত হলে পঞ্জরাস্থিগুলি ও স্টারনাম ওপরের দিকে ও সামনের দিকে উত্থিত হয়। এর ফলে বক্ষগহ্বরের আয়তন বৃদ্ধি পায়। যার কারণে অন্তঃবক্ষদেশীয় চাপ বায়ুমন্ডলের সাপেক্ষে কমে যায় এবং বায়ুমণ্ডল থেকে O2 সমৃদ্ধ বায়ু ফুসফুসে প্রবেশ করে।

নিঃশ্বাসের সময় প্রথমে মধ্যচ্ছদা আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে, অন্তঃপঞ্জরাস্থি পেশিগুলি প্রসারিত হয়।ফলে বক্ষপিঞ্জর ও ষ্টারনাম নিচে নেমে আসে ও ভিতরের দিকে প্রবেশ করে। এর ফলে বক্ষগহ্বরের আয়তন কমে যায় ও অন্তঃবক্ষদেশীয় চাপ, বায়ুমন্ডলের চেয়ে বেড়ে যায়। এর কারণে ফুসফুস থেকে CO2 সমৃদ্ধ বায়ু বায়ুমন্ডলের পরিত্যাক্ত হয়।

অ্যালভিওলাই গঠিত হয় অ্যালভিওলাই কোষ ও অ্যালভিওলাই ম্যাক্রোফাজ দিয়ে। অ্যালভিওলাই ম্যাক্রোফাজ, অ্যালভিওলাই কে অনাক্রমতা জনিত সুরক্ষা দেয়। ‌অ্যালভিওলাই-এ রক্তসহ কিছু জমা হলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে বাইরে বের করে দেয়।

বাতাসের বিভিন্ন পদার্থ শ্বাসকার্যের সময় ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং কখনো কখনো তার জন্য ফুসফুস রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যেমন- ধোঁয়াশার কারণে শ্বাসকার্য কষ্টকর হয়। সিলিকনের ধুলো থেকে ফুসফুসের সিলেকোসিস, অ্যাসবেসটসের ধুলো থেকে অ্যাসবেসটোসিস প্রভৃতি রোগ হয়।

 

⇐নীচে মানব শরীরের বিভিন্ন অংশের pdf টি শেয়ার করা হল⇒

  • File Name:- মানব শরীরের বিভিন্ন অংশ
  • No.of Page:- 9
  • Location:- Google Drive
  • Download Link:- [Download Here]

Leave a comment