ভারতের নদনদী সমূহ PDF || Indian River in Geography PDF

ভারতের নদনদী সমূহ PDF || Indian River in Geography PDF

ভারত নদীমাতৃক দেশ। স্থলভাগের জলভান্ডার এর মধ্যে নদী অন্যতম। নদী ছাড়াও ভূমির ওপর প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট কারণে গড়ে ওঠা হ্রদ, জলাশয় ও খালের জলের গুরুত্ব অপরিসীম। ভারতের নদনদী গুলিকে প্রবাহের অঞ্চল অনুযায়ী উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের নদনদী এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

Indian River in Geography PDF

উত্তর ভারতের নদনদী:

এই ধরনের নদীগুলির মধ্যে গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র প্রধান।

১)গঙ্গা নদী: গঙ্গা নদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিলোমিটার, ভারতে দৈর্ঘ্য ২০৭১ কিমি। অসংখ্য উপনদী ও শাখা নদের নিয়ে প্রবাহিত গঙ্গা ভারতের দীর্ঘতম নদী। গঙ্গা অববাহিকার ক্ষেত্রেমান প্রায় ৮.৬ লক্ষ বর্গ কিমি। এটি ভারতের মোট ক্ষেত্রমনের প্রায় ২৬ শতাংশ এলাকা জুড়ে প্রবাহমান। তিনটি গতি স্পষ্ট হওয়ায় এটি ভারতের আদর্শ নদী। কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা (উচ্চতা ৭,০১০ মিটার)থেকে গঙ্গা নদীর উৎপন্ন হয়েছে।

গতিপথ: উচ্চগতি: উৎস স্থলে গঙ্গা ভাগীরথী নামে পরিচিত। দেবপ্রয়াগের কাছে অলকানন্দার (পিন্ডার, মান্দাকিনী, ধৌলিগঙ্গা ও বিষেণগঙ্গার মিলিত প্রবাহ) সাথে ভাগীরথী মিলিত হয়েছে। ভাগীরথী ও অলকানন্দের মিলিত প্রবাহ দেবপ্রয়াগের পর গঙ্গা নামে পরিচিত। দেব প্রয়োগের পর গঙ্গা আরো দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে হরিদ্বারের কাছে সমভূমিতে পড়েছে। উৎপত্তিস্থল থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত ২৮০ কিমি গতিপথ গঙ্গার উচ্চগতির অন্তর্গত। মধ্যগতি: হরিদ্বার থেকে বিহারের রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত গঙ্গার মধ্যগতির অন্তর্গত। এই অংশে অসংখ্য উপনদী গঙ্গার সাথে মিশেছে। বাম তীরের প্রধান উপনদী গুলি হল রামগঙ্গা, গোমতী, ঘর্ঘরা, গণ্ডক, বুড়ীগন্ডক ও কোশী এবং ডানতীরের উপনদী হল যমুনা ও শোন। যমুনা গঙ্গার প্রধান উপনদী। নিম্নগতি: রাজমহল পাহাড় থেকে মোহনা পর্যন্ত অংশ গঙ্গার নিম্নগতির অন্তর্গত। রাজমহল পাহাড় থেকে গঙ্গা দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণমুখী হয়ে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের কাছে ভগবানগোলায় পদ্মা ও ভাগীরথী দুটি শাখায় ভাগ হয়েছে। প্রধান শাখা পদ্মা নামে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অপর শাখা ভাগীরথী নামে পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এর শেষ অংশের নাম হুগলি নদী। মোহনার কাছে গঙ্গা পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ অঞ্চল সৃষ্টি করেছে।

২) সিন্ধু নদী: সিন্ধু নদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৮৮০ কিমি, ভারতে এর প্রবাহ ৮০৯ কিমি। সিন্ধু, তিব্বতের মানস সরোবরের নিকট ৫,১৮০ উচ্চতায় কৈলাস পর্বতের একটি হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। উচ্চস্থলে এই নদীর নাম সিং-খাবাব। উৎসস্থল থেকে এই নদী উত্তর-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা ও বিতস্তা সিন্ধুর প্রধান পাঁচটি উপনদী। এই পাঁচটি নদী ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পাকিস্তানের সিন্ধুর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

জরুরী তথ্য

1. গঙ্গা ভারতের দীর্ঘতম নদী (মোট দৈর্ঘ্য ২,৫১০ কিমি, ভারতে ২,০৭১ কিমি)।

2. গঙ্গা-পদ্মার বদ্বীপ তথা সুন্দরবন বদ্বীপ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ।

3. ব্রহ্মপুত্র নদের ‘মাজুলি’ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী বদ্বীপ।

4. পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত গণ্ডকী নদীর উপর কালী-গণ্ডকী গিরিখাত (৫,৫৭১ মিটার)।

5. জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে অবস্থিত উলার ভারতের বৃহত্তম সুপেয় জলের হ্রদ।

6. কেরল রাজ্যের ভিম্বানাদ ভারতের বৃহত্তম কয়াল।

7. ওড়িশা রাজ্যের চিল্কা ভারতের বৃহত্তম উপহ্রদ।

8. ভারতের উচ্চতম হ্রদ হল লাদাখের প্যাংগং।

৩) ব্রহ্মপুত্র নদ: ব্রহ্মপুত্র নদের মোট দৈর্ঘ্য ২৯০০ কিমি এবং ভারতে এর প্রবাহ ৮৮৫ কিমি। ব্রহ্মপুত্র, কৈলাস পর্বতের চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্ব দিকে তিব্বতের মধ্য দিয়ে সাংপো নামে প্রায় ১৮০০ কিমি প্রবাহিত হয়েছে। এর উপনদীগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দিবং, লোহিত, ক্যামেত, সুবর্ণসিরি। বাংলাদেশে এটি যমুনা নাম নিয়ে পদ্মার সাথে মিলিত হয়েছে। যমুনা ও পদ্মার মিলিত প্রবাহ মেঘনা নাম নিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদেই সৃষ্টি হয়েছে ভারতের বৃহত্তম নদী দ্বীপ মাজুলী।

দক্ষিণ ভারতের নদী:

বিন্ধ্য ও সাতপুরা পর্বতের দক্ষিণের নদীগুলি মালভূমি অঞ্চলের নদী বা দক্ষিণ ভারতের নদী নামে পরিচিত।

১) নর্মদা নদী (দৈর্ঘ্য ১,৩১০ কিমি): মধ্যপ্রদেশের অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা বিন্ধ্য ও সাতপুরা পর্বতের মাঝে গ্রস্ত উপত্যকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খাম্বাত উপসাগরে পড়েছে। নর্মদা নদী জবলপুরের নিকট ধুঁয়াধার জলপ্রপাত সৃষ্টি করেছে। এর উপনদী গুলি হল হীরণ, বর্ণা ও কোলার প্রভৃতি।

২) তাপ্তী বা তাপী নদী (দৈর্ঘ্য ৭৩০ কিমি): এটিও গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। তাপ্তী মধ্যপ্রদেশের মুলতাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়েছে। তারপর মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অবশেষে খাম্বাত উপসাগরে পড়েছে। পূর্ণা, গিরনার, ভেঘর হল এর প্রধান প্রধান উপনদী।

৩) মহানদী (দৈর্ঘ্য ৮৫৭ কিমি): ছত্রিশগড়ের রায়পুর জেলার সিওয়া পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে উড়িষ্যার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। শিবনাথ, হামদো, মান্দ ও ঈব মহানদীর বামতীরের এবং জংক্, ওঙ্গ ও তেলেন ডান তীরের উপনদী।

৪) গোদাবরী নদী (দৈর্ঘ্য ১,৪৬৫ কিমি): এটি দক্ষিণ ভারতের দীর্ঘতম নদী। এই পশ্চিমঘাট পর্বতের ব্রহ্মগিরি থেকে উৎপন্ন হয়ে মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা ও অন্ধপ্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। দক্ষিণ ভারতের নদীগুলির মধ্যে গোদাবরীর দৈর্ঘ্য বেশি বলে একে “দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা” বলা হয়। গোদাবরী নদীর উৎস ত্রিম্বক উচ্চভূমি এবং মোহনা বঙ্গোপসাগর। পেনগঙ্গা, ওয়ার্ধা, ওয়েনগঙ্গা, ইন্দ্রাবতী ও শবরী গোদাবরীর বামতীরের প্রধান উপনদী এবং মঞ্জিরা ডানতীরের প্রধান উপনদী।

৫) কৃষ্ণা নদী (দৈর্ঘ্য ১,৪০০ কিমি): পশ্চিমঘাট পর্বতের মহাবালেশ্বরের মন্দিরের নিকট উৎপন্ন হয়ে কৃষ্ণা মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এই নদীর মোহনাতে বদ্বীপ গড়ে উঠেছে। কয়না, ঘাটপ্রভা, মালপ্রভা, ভীমা, তুঙ্গভদ্রা, মুসি ও মুনেরু কৃষ্ণার প্রধান উপনদী।

৬) কাবেরী নদী (দৈর্ঘ্য ৮০৫ কিমি): পবিত্রতার কারণে “দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা” বা “দক্ষিণ গঙ্গা” বলা হয়। ইহা পশ্চিমঘাট পর্বতের তালাকাবেরী থেকে উৎপন্ন হয়ে কর্নাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এর ডানতীরের উপনদী গুলি হল কবিনা, সুবর্ণবতী ও ভবানী এবং বামতীরের উপনদীগুলি হল হেমবতী, সিমসা, অর্কবতী। এই নদীতেই শিবসমুদ্রম জলপ্রপাত তৈরি হয়েছে।

 

 

 

Leave a comment