বুদ্ধি কি? এর বৈশিষ্ট্য লেখ || Intelligence

বুদ্ধি কি? এর বৈশিষ্ট্য লেখ || Intelligence

প্রিয় বন্ধুরা,

আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম যা আপনাদের আগত পরীক্ষার জন্য খুবই উপকারী হয়ে উঠবে। যারা Primary & Upper Primary Tet এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলেহোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জয়েন হয়ে যান এখানে সিলেবাস অনুযায়ী সমস্ত নোট শেয়ার করা হয়। তাই সময় মত সমস্ত নোট পেতে যুক্ত হয়ে যান।

 

Intelligence

বুদ্ধি (Intelligence):

বুদ্ধি হল কতগুলি সহজাত ক্ষমতার সমষ্টি যা পেক থেকে নিত্য নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলতে সাহায্য করে। মনোবিদ স্টার্নের মতে, জীবনের নতুন সমস্যা বা পরিস্থিতির সঙ্গে অভিযোজন করার সাধারণ মানসিক ক্ষমতাই হলো বুদ্ধি। মনোবিদ ডিয়ারবোর্নের মতে,বুদ্ধি হল অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে লাভবান হওয়ার ক্ষমতা।

বুদ্ধির বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

1. বুদ্ধি হল মৌলিক মানসিক ক্ষমতা।
2. এটি একটি সহজাত (inherited) ক্ষমতা, তবে একে কার্যকরী করতে অনুশীলনের প্রয়োজন। সেই অর্থে বুদ্ধি অর্জিত বটে।
3. বৃদ্ধির বিভিন্ন স্তরে বুদ্ধির বিকাশের হাড় ভিন্ন ভিন্ন হয়।
4. লিঙ্গভেদে বুদ্ধির বিশেষ কোনো পার্থক্য হয় না।
5. বুদ্ধি দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে।

বুদ্ধির কাজ (Functions):

বুদ্ধি এমন একটি মানসিক শক্তি যা আমাদের সাহায্য করে-
1. অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে।
2. নতুন পরিবেশের সঙ্গে সংহতি বিধান করতে।
3. বস্তুর মধ্যে সম্বন্ধ নির্ণয় করতে।
4. কোনো সমস্যা আর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি থেকে শিক্ষা নিতে।

বুদ্ধির প্রকারভেদ(Types of intelligence):

থনডাইকের শ্রেণীবিভাগ:

থনডাইক বুদ্ধিকে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন।

1. মুর্ত বুদ্ধি(Concrete intelligence): হাতে কলমে কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়। কোনো কিছু নির্দিষ্ট ভাবে বিন্যস্ত করা, যন্ত্রের বিভিন্ন অংশ জোড়া লাগানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই বুদ্ধির প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।

2. বিমূর্ত বুদ্ধি (Abstract intelligence): ভাষার ব্যবহার, সংখ্যার ব্যবহার, চিন্তা, কল্পনা, যুক্তি নির্ণয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই বুদ্ধির প্রয়োগ হয়।
উদাহরণ: গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে, সাহিত্যের বিশ্লেষণ করতে এই বুদ্ধির প্রয়োগ করা হয়।

3. সামাজিক বুদ্ধি (Social intelligence): দৈনন্দিন জীবনের সামাজিক পরিবেশে যথাযথ প্রতিক্রিয়া দিতে এই বুদ্ধির প্রয়োজন হয়।
উদাহরণ: সকলের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করা।

এছাড়াও আছে প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি যা প্রাকৃতিক আচরণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যেমন-বাঞ্ছিত প্রক্ষোভের ব্যবহার এবং অপাচিত প্রক্ষোভে নিয়ন্ত্রণ।

বুদ্ধির তত্ত্ব(Theories of intelligence):

স্পিয়ারম্যানের দ্বি উপাদান তত্ত্ব (Spearman’s Two-factor Theory):

ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী স্পিয়ারম্যান ১৯০৪ সালে গণিত নির্ভর বুদ্ধির একটি তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা “American Journal of Psychology”-তে প্রকাশ করেন। তাঁর মতে, বুদ্ধি দুটি উপাদান নিয়ে গঠিত। একটিকে বলা হয় সাধারণ শক্তি(G) এবং অপরটি হলো বিশেষ শক্তি (S)

G-উপাদানের বৈশিষ্ট্য:

1. এটি হলো সর্বজনীন জন্মগত মানসিক ক্ষমতা।
2. কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সমস্ত কার্যাবলীর মধ্যে এটি সব সময় একই পরিমাণে থাকে।
3. ‘G’ এর পরিমাণ ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন ভিন্ন হয়।
4. এটি ব্যক্তির যে-কোনো প্রকারের কাজেই প্রয়োজন হয়।
5. ব্যক্তির মধ্যে এর পরিমাণ যত বেশি হয়, তার সাফল্যের সম্ভাবনাও তত বেশি হয়।
6. G-উপাদান সমস্ত বৌদ্ধিক কাজে প্রেরণা যোগায়।
7. G-উপাদানের তারতম্যের জন্যই ব্যক্তিগত বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়।

S-উপাদানের বৈশিষ্ট্য:

1. এগুলি প্রধানত অর্জিত (শিখনের মাধ্যমে)।
2. ব্যক্তির প্রতিটি কাজে পৃথক পৃথক বিশেষ শক্তির প্রয়োজন।
3. এক ব্যক্তির থেকে অন্য ব্যক্তিতে এর পরিমাণ ও সংস্থার তারতম্য দেখা যায়।।
4. একই ব্যক্তির মধ্যে একাধিক বিশেষ শক্তি থাকতে পারে এবং এর পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে।
5. বিদ্যালয় কার্যাবলীতে সহপাঠ্যক্রমিক বিষয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে S-উপাদানের পরিমাণ বাড়ানো যায়।

থার্স্টোনের বহু উপাদান তত্ত্ব (Thurstone’s theory):

থার্স্টোনের মতে বুদ্ধির মধ্যে সাতটি মৌলিক শক্তি বর্তমান।
1. M- Memory(স্মৃতি)
2. N- Numerical ability (সংখ্যা ব্যবহারের ক্ষমতা)
3. P- Perceptual ability (প্রত্যক্ষণমূলক ক্ষমতা)
4. R- Reasoning ability (বিচার করার ক্ষমতা)
5. S- Space relation factor (স্থান চেতনা)
6. V- Verbal ability (ভাষাবোধের ক্ষমতা)
7. W- Word fluency ability (শব্দ উৎকর্ষ ক্ষমতা)
• থার্স্টোন এর মতে, এই সাতটি প্রাথমিক মানসিক ক্ষমতা বিভিন্ন কাজের মধ্যে বিভিন্ন পরিমাণে থাকে।
• কোনো মানসিক সক্রিয়তা বিশিষ্ট কাজে উপরোক্ত এক বা একাধিক বিশেষ ধর্মীয় মানসিক শক্তির প্রয়োজন।

গিলফোর্ডের ধী-শক্তির গঠন তত্ত্ব [Structure of Intellect Model of Guildford(SOI-Model)]:

অন্যান্য উপাদান বিশ্লেষণ ভিত্তিক তত্ত্বের সঙ্গে গিলফোর্ডের বুদ্ধি তত্ত্বের কয়েকটি মৌলিক পার্থক্য আছে। প্রথমত, তিনি বুদ্ধি(intelligence) এবং ধী-শক্তি(intellect) এই দুই ধারণাকে তাঁর ত্বকের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। গিলফোর্ডের মতে, ধী-শক্তি হলো মানুষের সকল রকম বৌদ্ধিক শক্তির সামগ্রিক আধার। যার প্রকাশ ঘটে বিভিন্ন মানসিক ও অন্যান্য ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে। কিন্তু পরিবেশগত কারণে এই শক্তির সবটা বাইরে প্রকাশ পায় না বা কাজে লাগানো যায় না। অন্যদিকে বুদ্ধি হল ধী-শক্তির যে অংশটা কাজে লাগানো হয় বা প্রকাশ পায় তাই। মোটকথা বুদ্ধি হলো ধী-শক্তির অংশ বিশেষ।

গিলফোর্ড ধী-শক্তিকে ত্রিমাত্রিকভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। মাত্রা তিনটি হল-1. বিষয়বস্তুগত মাত্রা (Content), 2. প্রতিক্রিয়ার মাত্রা (Operation), 3.উৎপাদনগত মাত্রা(Product)।

1. বিষয়বস্তু: বৌদ্ধিক ক্রিয়া উদ্দীপিত হওয়ার জন্য এবং বৌদ্ধিক ক্রিয়া সম্পন্ন করার মাধ্যম হিসেবে যে উপাদান গুলি দরকার হয়, সেগুলি হল বিষয়বস্তু। এগুলি চার প্রকার- মূর্ত, প্রতীকরুপী, বিমুর্ত এবং আচরণমূলক।

2. প্রতিক্রিয়া বা বৌদ্ধিক ক্রিয়া: যে সমস্ত মানসিক ক্রিয়া আমাদের বৌদ্ধিক আচরণ নিষ্পন্ন করে, তাই হলো প্রতিক্রিয়া বা বৌদ্ধিক ক্রিয়া। এগুলি পাঁচ প্রকার, যথা- প্রজ্ঞা, স্মৃতি, কেন্দ্রাপসারী চিন্তন, কেন্দ্রানুগ চিন্তন এবং মূল্যায়ন

3. উৎপাদন: প্রতিক্রিয়া বা বৌদ্ধিক ক্রিয়ার ফলে যে ধারণা গুলি উৎপন্ন হয়, তাই হল উৎপাদন। এগুলি হলো- একক, শ্রেণী, সম্পর্ক, ব্যবস্থাপনা, পরিবর্তনশীলতা এবং তাৎপর্যবিচার

অর্থাৎ, গিলফোর্ডের ধী-শক্তির ত্রিমাত্রিক তত্ত্বে, পাঁচ প্রকার বৌদ্ধিক ক্রিয়া বা মানসিক প্রতিক্রিয়া, চার প্রকার বিষয়বস্তু এবং ছয় প্রকার উপজাত উপাদানের কথা বলা হয়েছে। গিলফোর্ডের মতে, প্রতিটি বিষয়বস্তুর সঙ্গে প্রত্যেক প্রকার প্রতিক্রিয়া যুক্ত হয় এবং তার ফলে যে কোনো উপজাত ধারণা বা উপাদান গঠিত হতে পারে। অর্থাৎ আমাদের ধী-শক্তি হলো (4x5x6) অর্থাৎ 120 টি উপাদানের সমন্বয়।

বর্তমানে বিষয়বস্তুগত মাত্রার প্রতীকরুপী বিষয়কে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলি হল দৃষ্টিগত ও শ্রবনজাত। ফলে বিষয়বস্তু মাত্রা চারটির পরিবর্তে পাঁচটি শ্রেণি রয়েছে এবং বুদ্ধির মোট উপাদান হয়েছে (5x5x6) অর্থাৎ 150 টি। গিলর্ফোড উপাদান বিশ্লেষণের সাহায্যে মোট 90 টি বুদ্ধির উপাদান আবিষ্কার করেছেন। তার ধারণা আগামী দিনে অবশিষ্ট উপাদান গুলি আবিষ্কৃত হবে।

স্টানবার্গের তত্ত্ব(Sternberg’s theory):

স্টানবার্গের বুদ্ধিতত্ত্বে ‘উপাদান বিশ্লেষণ’ ও ‘প্রজ্ঞামূলক তত্ত্ব’- এই দুইয়ের সমন্বয় দেখতে পাওয়া যায়। স্টানবার্গ তার বুদ্ধিতত্ত্বে বুদ্ধির তিনটি স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন। স্তর গুলি হল-

1. অধি উপাদান (Meta component):
• সমস্যা অস্তিত্ববোধ।
• সমস্যার প্রকৃতি অনুধাবন।
• প্রাকৃতিক উপাদান সম্বন্ধে বোধ।
• উপাদানগুলির সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে সমাধানের পথ নির্বাচন করা।
• মানসিক প্রতিরোধ গঠনের সাহায্যে তথ্যসমূহকে একত্রিত করা।
• মনোযোগকে যথাযথভাবে পরিচালনা করা।
• কার্যসম্পাদনের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে সংগতি রেখে আপন অবস্থানকে নিয়ন্ত্রণ করা।
• কার্যসম্পাদনের যথার্থতা ও গুনাগুন সম্পর্কে ফিডব্যাক বা প্রতিসংকেত বুঝতে পারা।

2. কার্যসম্পাদন ভিত্তিক উপাদান (Performance component):
• উদ্দীপকের প্রকৃতি অবধারন করা।
• উদ্দীপকের অংশের বাদ দুটি উদ্দীপকের মধ্যে কি সম্পর্ক রয়েছে তা অনুধাবন করতে পারা।
• পূর্বের কোন সম্পর্ক বা সম্বন্ধকে বর্তমান ক্ষেত্রে ব্যবহার করা।

3. জ্ঞান আহরণভিত্তিক উপাদান (Knowledge acquisition component):
• নির্বাচিত সংকেতায়ন (Selective encoding),
• নির্বাচিত সমাধার (Selective combination),
• নির্বাচিত তুলনা (Selective comparison)
স্টার্নবার্গের তত্ত্ব এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায় রয়েছে। কৃত্রিম অতি সংক্রান্ত গবেষণা এই জাতীয় জ্ঞান মূলক তত্ত্বের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।

   ⇐নীচে pdf এর লিংক টি শেয়ার করা হল⇒

  • File Name:- বুদ্ধি
  • No.of Page:- 5
  • Location:- Google Drive
  • Download Link:- [Download]

 

Leave a comment