বায়ুমণ্ডলের উপাদান ও বিভিন্ন স্তর সমূহ||Layers of the Atmosphere

বায়ুমণ্ডলের উপাদান ও বিভিন্ন স্তর সমূহ||Layers of the Atmosphere

আজ ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রপিক Layers of the Atmosphere: বায়ুমন্ডলের উপাদান ও বিভিন্ন স্তর সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।‌ সমস্ত পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক থেকে দুই নম্বর এখান থেকে আসে।

Layers of the Atmosphere

বায়ুমণ্ডল কাকে বলে?

উঃ-মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে পৃথিবীকে চাদরের মত ঘিরে থাকা এবং পৃথিবীর আবর্তনের সাথে আবর্তিত হওয়া গ্যাসীয় আবরণকে বায়ুমন্ডল বলে।

বায়ুমণ্ডলের প্রয়োজনীয়তা কি?

উঃ-বায়ুর প্রয়োজনীয়তাগুলি নিম্নে উল্লেখিত হল:-১)জীবমন্ডলের পক্ষে উপযোগী গ্যাসীয় উপাদানসমূহ বায়ুমন্ডলে পাওয়া যায়। ২) সূর্যের সমস্ত ক্ষতিকারক রশ্মি বায়ুমণ্ডল দ্বারা শোষিত হয়। ৩) বায়ুমন্ডলের উপস্থিতিতে জীবমন্ডলের বেঁচে থাকার আদর্শ উষ্ণতা পৃথিবীতে বজায় আছে। পৃথিবীর গড় উষ্ণতা ১৫° সেলসিয়াস। ৪) আবহাওয়ার যাবতীয় ঘটনা যেমন-মেঘ, ঝড়, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি বায়ুমন্ডলে ঘটে। ৫) বায়ুমণ্ডল না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকত না।

বায়ুমণ্ডলের ধারণা ও উপাদান:

বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন গ্যাস, জলীয় বাষ্প, নানান জৈব ও অজৈব বস্তু কণার এক যান্ত্রিক মিশ্রণ। বায়ুমণ্ডলের মোট ওজন প্রায় ৯,০৪৬ হাজার কোটি টন। বায়ুমণ্ডলের তিনটি প্রধান উপাদান হলো- ১) গ্যাসীয় উপাদান, ২) জলীয় বাষ্প এবং ৩) কঠিন বস্তুকণা।

১) গ্যাসীয় উপাদান: বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান ও এগুলি শতকরা উপস্থিতি নিচের তালিকায় দেওয়া হলো।
বায়ুমন্ডলের অন্যান্য গ্যাসীয় উপাদান গুলি হল: নিয়ন (Ne), হিলিয়াম (He), ওজোন(O3), হাইড্রোজেন (H2), ক্রিপ্টন (Kr), জেনন (Xe), মিথেন (CH4) ইত্যাদি।

২)জলীয় উপাদান: এটি বায়ুমণ্ডলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভারতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ প্রায় ১৪৬ হাজার কোটি টন। জলীয় বাষ্প বায়ুমন্ডলের ১০ কিমি উচ্চতার মধ্যে অবস্থান করে। 90% জলীয় বাষ্প বায়ুমন্ডলের ৬ কিমির মধ্যে অবস্থান করে। উচ্চতা, অক্ষাংশ এবং ঋতুভেদে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে বা বাড়ে। আদ্র ক্রান্তীয় অঞ্চলের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সর্বাধিক, মেরু অঞ্চলে সর্বনিম্ন।

৩) কঠিন বস্তুকনা: কঠিন বস্তু কণা বা এরোসল বায়ুমন্ডলের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বায়ুমণ্ডলের নিচের স্তরে কঠিন বস্তুকণার উপস্থিতি বেশি।

বায়ুর উপাদান উষ্ণতার তারতম্য অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস:

বায়ুমন্ডলের উপাদানগত পার্থক্য এবং বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা হ্রাস বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে বায়ুমণ্ডলকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করা হয়। যথা:-

১) রাসায়নিক গঠন ও উপাদান গত পার্থক্য অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস: উপাদানের পার্থক্য বা রাসায়নিক গঠনের তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

অ) হোমোস্ফিয়ার বা সমমন্ডল: ভূপৃষ্ঠ থেকে ঊর্ধ্বে ৮৮ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুর উপাদান সমূহ সমান অনুপাতে থাকায় একে সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার বলে।

আ) হেটেরোস্ফিয়ার বা বিষমমন্ডল: হোমোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বে ৮৮ কিমি থেকে ১০,০০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুমণ্ডল বিষমমন্ডলের অন্তর্গত। এখানে গ্যাসীয় উপাদান গুলির অনুপাত এক থাকে না। এক একটি স্তরে এক একটি গ্যাসের প্রাধান্য থাকে বলে এই স্তরকে বিষম মন্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার বলে।

২) উষ্ণতার হ্রাস বৃদ্ধির ভিত্তিতে বায়ুমন্ডলের স্তরবিন্যাস: উষ্ণতার হ্রাস বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

অ) ট্রপোস্ফিয়ার: গ্রিক শব্দ ‘Tropos’ অর্থাৎ ‘Torbulence’ বা ‘Mixing’(মিশে যাওয়া) এবং ‘Sphere’-এর অর্থ ‘অঞ্চল’ বা মন্ডল থেকে এই স্তরের নামকরণ হয়েছে ট্রপোস্ফিয়ার। এটি বায়ুমণ্ডলের নিম্নতম স্তর। ভূপৃষ্ঠ থেকে ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা নিরক্ষীয় প্রদেশে ১৮ কিমি এবং দুই মেরুতে ৮ কিমি হয়।
বৈশিষ্ট্য: ১) গ্যাসে উপাদানের মোট ভরের প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং বায়ুমন্ডলের প্রায় ১০০ শতাংশ জলীয়বাষ্প ও কঠিন বস্তু কনা এই স্তরে উপস্থিত থাকে। এই স্তরে এরোসলের পরিমাণ সর্বাধিক। ২) বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে উষ্ণতা হ্রাসের স্বাভাবিক হার ৬.৫ সে./কিমি। উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর ঘনত্ব ও চাপ জলীয় বাষ্প কমতে থাকে। তাই এই স্তরের উচ্চতা বাড়লে উষ্ণতা কমে। ৩) মেঘ, ঝড়, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি আবহাওয়ার যাবতীয় ঘটনা এই স্তরে ঘটে, একে ক্ষুদ্ধমন্ডল বলে। ৪) সমস্ত বায়ুদূষক এই স্তরে দেখা যায়।

ট্রপোপজ: ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বে প্রায় ৩ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত উষ্ণতার হ্রাস বা বৃদ্ধি না ঘটা স্তরটিকে ট্রপোপজ [পজের অর্থ ‘থামা’] বলে। উচ্চতা বৃদ্ধি পেলেও একই উষ্ণতা থাকায় একে সমতাপ অঞ্চল বলে। ট্রপোপজ ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার এর মধ্যবর্তী স্তর।

আ)স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার: Latin শব্দ ‘Stratum’-এর অর্থ স্তর, ট্রপোপজের ঊর্ধ্বে ৫০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বলে।

বৈশিষ্ট্য: ১)স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধিতে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। ট্রপোপজের -৮০°সে. উষ্ণতা বেড়ে স্ট্যাটোস্ফিয়ারের উর্ধ্বে ৪°সে. হয়। ২) স্ট্যাটোস্ফিয়ারে জানুয়ারি ও জুলাই মাসের উষ্ণতার তারতম্য অধিক। ৩) ওজোন গ্যাসের উপস্থিতি বেশি থাকায় স্ট্যাটাসপিয়ারের নিচের অংশকে ওজোন স্তর(২৫-৩৫কিমি)বলে। অতিবেগুনি রশ্মি শোষিত হওয়ায় এই স্তরে উষ্ণতা বেশি। ৪) এই স্তরের বায়ুপ্রবাহ, জলীয় বাষ্প, মেঘ না থাকায় এই স্তরকে শান্তমণ্ডল বলে। দ্রুতগামী জেট বিমান এই স্তরে চলাচল করে। তবে আন্টার্কটিকা অঞ্চলে শীতকালে মাঝে মাঝে মৌক্তিক বা মুক্তি মেঘের বা মাদার অফ পার্ল মেঘের সঞ্চার ঘটে।

স্ট্র্যাটোপজ: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বে বায়ুমণ্ডলের স্থির উষ্ণতা যুক্ত অঞ্চলকে স্ট্র্যাটোপজ বলে। স্ট্র্যাটোপজ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ও মেসোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী স্তর।

ই)মেসোস্ফিয়ার: [গ্ৰিক শব্দ ‘Meso’-এর অর্থ ‘মধ্যভাগ’] স্ট্র্যাটোপজের ঊর্ধ্বে ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত অংশকে মেসোস্ফিয়ার বলে।

বৈশিষ্ট্য: ১) উচ্চতা বৃদ্ধিতে উষ্ণতা হ্রাস পায। ৮০ কিমি উষ্ণতায় এই স্তরের বায়ুমন্ডলের সর্বনিম্ন উষ্ণতা হয় -১০০°সে.। ২) এই তরে বায়ুর চাপ অনেক কম হয় এবং এই স্তরে উল্কাপিণ্ড পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ৩) এই স্তরে অতি হালকা ‘নৈশদ্যুতি মেঘ’ সৃষ্টি হয়।

মেসোপজ: মেসোস্ফিয়ারের ঊর্ধাংশে কিছুদূর পর্যন্ত স্থির উষ্ণতাযুক্ত স্তরকে মেসোপজ বলে। এই স্তর মেসোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী স্তর।

ঈ) থার্মোস্ফিয়ার বা আয়নোসফিয়ার: মেসোপজের ঊর্ধ্বে ৫০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে থার্মোস্ফিয়ার বলে। এই স্তরের নিচের অংশের বায়ু আয়নিত অবস্থায় থাকায় একে আয়নোস্ফিয়ার বলে।

বৈশিষ্ট্য: ১) ২০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত পারমাণবিক নাইট্রোজেন ও আণবিক অক্সিজেন উপস্থিত থাকে। ২০০ কিমির পর আণবিক অক্সিজেন বেশি উপস্থিত থাকে। ২) এখানে বায়ুর ঘনত্ব অত্যন্ত কম। উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে উষ্ণতা দ্রুত হারে বাড়ে। ৩৫০ কিমি উচ্চতায় উষ্ণতা বেড়ে দাঁড়ায় ১২০০°সে.। ৩) সূর্য থেকে আসা রঞ্জন রশ্মি, গামা রশ্মি, অতিবেগুনি রশ্মি বায়ুমণ্ডলের পরমাণু ভেঙে আয়নিত করায় এই স্তরের নাম আয়নোস্ফিয়ার। ৪) বায়ু কোনা পরমাণুতে পরিণত হওয়ায় শক্তিশালী ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংস্পর্শে বেরিয়ে আসা আলোকরশ্মিকে সুমেরুতে অরোরা বোরিয়ালিস বা সুমেরুপ্রভা এবং কুমেরুতে অরোরা অস্ট্রালিস বা কুমেরুপ্রভা বলে।

উ)এক্সোস্ফিয়ার: আয়নোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বে ৫০০-৭০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত স্তরকে এক্সোস্ফিয়ার বলে।

বৈশিষ্ট্য: ১) এই স্তরে আণবিক অক্সিজেন, হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায়। ২) এই স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে উষ্ণতা ১২০০-১৬০০°সে. পর্যন্ত হয়, যদিও বাতাসের ঘনত্ব কম থাকায় এই উষ্ণতা অনুভব করা যায় না।

ঊ)ম্যাগনেটোস্ফিয়ার: এক্সোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বাংশকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলে। এটি বায়ুমন্ডলের ঊর্ধ্বতম স্তর তথা পৃথিবীর শেষ সীমা।

বৈশিষ্ট্য: ১) সৌর বায়ু থেকে নির্গত ইলেকট্রন ও প্রোটন দ্বারা গঠিত চৌম্বক ক্ষেত্র বায়ুমণ্ডলকে বেষ্টন করে আছে বলে এই স্তরকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলে। সৌর ঝড় এই স্তরকে প্রসারিত হওয়া রোধ করে। ২) এই স্তরের পৃথিবীর চুম্বকীয় ক্ষেত্র থেমে যাওয়া অংশকে ‘ম্যাগনেটোপজ’ বলে। নিরক্ষীয় অঞ্চলের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,০০০ কিমি এবং ১৬,০০০ কিমি উচ্চতার দুটি ঘনব যুক্ত ম্যাগনেটোপজকে ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বলয় বলে।

 

Leave a comment