ভারতের ভূপ্রকৃতি, উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল||Physical Environment of India
Physical Environment of India:আজ ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রপিক ভারতের ভূপ্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। এখান থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সব পরীক্ষায় এসে থাকে।
ভারতের ভূ-প্রকৃতি
ভারতের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক যুগে গঠিত হয়েছে। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার ফলে ভারতে ভূপ্রকৃতিগত নানা বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। সেদিক থেকে ভারতকে ‘পৃথিবীর একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ’ বা ‘উপমহাদেশ’ বলা হয়। ভূমিরূপের বৈচিত্রের বিচারে ভারতের ভূপ্রকৃতিকে প্রধানত ছয়টি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন – ক) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল, খ) উত্তর-পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি বা পূর্বাচল। গ) উত্তরের নদী গঠিত সমভূমি অঞ্চল, ঘ) উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল, ঙ) উপকূলের সমভূমি অঞ্চল এবং চ) দ্বীপ অঞ্চল। ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগগুলির মধ্যে আয়তনে ও উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল বৃহত্তম ও দ্বীপ অঞ্চল ক্ষুদ্রতম।
উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল(হিমালয় পর্বত)
অবস্থান: ভারতের উত্তরে অবস্থিত হিমালয় পৃথিবীর উচ্চতম নবীন ভঙ্গিল পর্বত। হিমালয় পর্বতমালা ভারতের উত্তর-পশ্চিমে নাঙ্গা পর্বত(৮,১২৬ মি) থেকে পূর্ব দিকে অরুণাচল প্রদেশের পূর্ব সীমানা অবস্থিত নামচাবারোয়া(৭,৭৫৭ মি) পর্যন্ত বিস্তৃত। ২,৭০০ কিমি দীর্ঘ এই পর্বতটি ধনুকের মতো বেঁকে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রসারিত।
ভূ-প্রকৃতি: হিমালয় পৃথিবীর নবীনতম ভঙ্গিল পর্বত। গঠন কাজ এখনো চলছে। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের ভূপ্রকৃতিকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- ১) উত্তর দক্ষিণে বা প্রস্থ বরাবর এবং ২) পূর্ব-পশ্চিমে বা দৈর্ঘ্য বরাবর।
হিমালয় কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল?
উঃ- আজ যেখানে হিমালয় পর্বতমালা অবস্থান করছে, কয়েক কোটি বছর আগে সেখানে ছিল টেথিস নামে এক অগভীর সমুদ্র। টারশিয়ারী যুগে ভারতীয় উপদ্বীপীয় পাত ও ইউরেশীয় পাতের চাপে টেথিসের পলি ভাঁজপ্রাপ্ত হয়ে হিমালয়সমেত মধ্য এশিয়ার অন্যান্য পর্বত গুলির সৃষ্টি হয়েছে।
একনজরে কিছু তথ্য:
1. হিমালয় পর্বত পৃথিবীর উচ্চতম নবীন ভঙ্গিল পর্বত।
2. কারাকোরাম পর্বতের গডউইন অস্টিন (K2)(৮,৮১১ মি) ভারতের উচ্চতম শৃঙ্গ।
3. আরাবল্লি পর্বত পৃথিবীর প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বত।
4. আন্দামান আগ্নেয় দ্বীপের সমষ্টি হলেও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কিছু অংশ প্রবাল দ্বারা গঠিত।
5. হিমাদ্রি হিমালয়ের উল্লেখযোগ্য গিরিপথ গুলি হল-বুর্জিলা, জেলেপলা, নথুলা প্রভৃতি। ডুংরি লা বা মানা পাস ভারতের উচ্চতম গিরিপথ।
উত্তর থেকে দক্ষিনে বিস্তৃতি অনুযায়ী হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল চার ভাগে বিভক্ত
যথা- A)টেথিস হিমালয়, B)হিমাদ্রি বা গ্ৰেট হিমালয়, C) হিমাচল বা মধ্য হিমালয় ও D) শিবালিক বা অবহিমালয়।
A) টেথিস হিমালয়: টেথিস হিমালয় তিব্বত হিমালয় এবং নেপালে মহাভারত লেখ নামে পরিচিত। উত্তরে সিন্ধু-সাংপো উপত্যকা ও দক্ষিণে উচ্চ হিমালয়ের মাঝে টেথিস হিমালয় অবস্থিত। এই অংশের প্রধান শৃঙ্গ গুলি হল গডউইন অস্টিন বা K2, গাসেরব্রুম-I এবং II, লিও পারগেল, ব্রডপিক প্রভৃতি।
B) হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয়: এটি হিমালয়ের উচ্চতম অংশ। টেথিস হিমালয়ের উত্থানের সাথে প্রথমবার ভূ-আলোড়নের সময়েই এই অঞ্চলের উত্থান ঘটে। টেথিস ও মধ্য হিমালয়ের মাঝে হিমাদ্রি হিমালয় অবস্থিত। মাউন্ট এভারেস্ট (৮,৮৪৮ মিঃ), কাঞ্চনজঙ্ঘা, চোওয়ু, মাকালু, ধবলগিরি অন্নপূর্ণা, কেদারনাথ, নন্দাদেবী ইত্যাদি অনেক তুঁই চার্বিত শৃঙ্গের অবস্থান এই অংশে দেখা যায়।
C) হিমাচল বা মধ্য হিমালয়: ২.৫-৩ কোটি বছর আগে দ্বিতীয়বার প্রবল ভূ-আলোড়নের ফলে শিবালিক ও হিমাদ্রির মাঝে হিমাচল বা মধ্য হিমালয়ের উত্থান ঘটে। এই অংশের প্রধান পর্বতশ্রেণী গুলি হল পিরপাঞ্জাল, ধওলাধর মুসৌরি, নাগটিব্বা প্রভৃতি। পিরপাঞ্জাল এখানকার বৃহত্তম পর্বতশ্রেণী। হিমাচল হিমালয়ের প্রধান গিরিপথ গুলি হল পিরপাঞ্জাল, বুর্জিলা, বানিহাল(এশিয়ার দীর্ঘতম সুরঙ্গ) প্রভৃতি।
D) শিবালিক বা অবহিমালয়: হিমালয়ের দক্ষিণতম অংশটি শিবলিক বা অবহিমালয় নামে পরিচিত। হিমাদ্রি ও হিমাচল হিমালয় থেকে সৃষ্ট নদীসমূহ হিমাচল হিমালয়ের পাদদেশে নুড়ি, বালি, পলি সঞ্চয় করে। শিবালিকের উওরে কয়েকটি উপত্যকার সৃষ্টি হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে এগুলি ‘দুন’ ও পূর্ব ভারতে ‘দুয়ার’ নামে পরিচিত। যেমন- দেরাদুন, কোটা, পাটনি, চৌখাম্বা প্রভৃতি।