Structure of Cell || কোশের গঠন সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য।

Table of Contents

কোশের গঠন/STRUCTURE OF CELL

Structure of Cell

সূচনা(Introduction):

এই বিশ্বে অসংখ্য প্রজাতির জীব বসবাস করে। তাদের মধ্যে কেউ এককোষী আবার কেউ বহু কোষী। জীব মাত্রই দেহ এক বা একাধিক কোষ দিয়ে গঠিত। কোশ জীবদের গঠনমূলক ও জৈবনিক ক্রিয়ামুলক একক। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে কোষ বিদ্যা বা সাইটোলজি (Cytology) নামক জীব বিজ্ঞানের একটি শাখা স্বীকৃতি লাভ করে।

১৫৯০ খ্রিস্টাব্দে হল্যান্ডের জ্যানসেন ভাতৃদ্বয় (চশমা বিক্রেতা) এফ.জ্যানসেন ও জেট.জ্যানসেন প্রথম অণুবীক্ষণিক যন্ত্র আবিষ্কার করার পর থেকেই কোশ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। ইংরেজ বাস্তুকার রবার্ট হুক নিজের তৈরি অণুবীক্ষণ যন্ত্রে প্রথম কোষ আবিষ্কার করেন।

কোষের সংজ্ঞা:

প্রভেদক ভেদ্য আবরণী বেষ্টিত প্রোটোপ্লাজম দিয়ে গঠিত স্বপ্রজননশীল জীবদেহের গঠনমূলক ও জৈবনিক ক্রিয়ামূলক এককে কোষ বলে।

উদাহরণ:-

সমস্ত সজীব বস্তুই কোষ দ্বারা গঠিত।

ব্যতিক্রম:-

স্তন্যপায়ী প্রাণীর পরিণত লোহিত কণিকায় নিউক্লিয়াস অনুপস্থিত।

• নিউক্লিয়াস নামকরণ করেন রবার্ট ব্রাউন।

• প্রোটোপ্লাজম নামকরণ করেন পারকিনজি।

• ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে স্লেইডেন ও শোয়ান কোশবাদ বা সেলথিয়োরি প্রবর্তন করেন।

প্রোটোবায়োটা বা অকোষীয় জীব এবং সাইটোবায়োটা বা কোষীয় জীবের সংজ্ঞা:

যে সকল জীবের দেহে সাইটোপ্লাজম অনুপস্থিত তাদের প্রোটোবায়োটা বা অকোষীয় বলে। যেমন-প্রিয়নখ ও ভাইরয়েড এবং যে সকল জীবের দেহ সাইটোপ্লাজম যুক্ত তাকে সাইটোবায়োটা বা কোষীয় জীব বলে। যেমন-সকল সজীব জীবই কোশীয়।

 কোষের প্রকারভেদ:

নিউক্লিয়াসের সংগঠনের ওপর ভিত্তি করে কোষ তিন প্রকার। যথা- 1. আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষ বা প্রোক্যারিওটি কোষ, 2. মধ্য নিউক্লিয়াস যুক্ত কোষ বা মেসোকেরিওটিক কোশ, 3. আদর্শ নিউক্লিয়াস যুক্ত কোষ বা ইউক্যারিওটিক কোশ।

1. প্রোক্যারিওটিক কোষ:

যেসব কোষের নিউক্লিয়াসটিতে নিউক্লিওপর্দা, নিউক্লিওরস এবং ক্রোমোজোম থাকে না অর্থাৎ সুগঠিত নয় তাকে আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষ বা প্রোক্যারিওটিক কোষ বলে।

বৈশিষ্ট্য:

a) এইরকম কোষে আদর্শ নিউক্লিয়াস থাকে না।

b) কোষ পর্দা থাকে কিন্তু কোষ প্রাচীর কয়েকক্ষেত্রে থাকে।

c) এই কোষে ক্রোমোজোম গঠিত হয় না।

d) কোষের সেন্ট্রোমিয়ার থাকে না।

e) পোকার কোষের রাইবোজোম 70S প্রকৃতির।

f) এই প্রকার কোষে কোনো কোষ অঙ্গাণু থাকে না।

g) কোষে ভ্যাকুওল সৃষ্টি হয় না।

2. মেসোক্যারিওটিক কোষ:

যেসব কোশে নিউক্লিয়াসটি সুগঠিত অর্থাৎ নিউক্লিও পর্দা, নিউক্লিও রস এবং ক্রোমোজোম থাকে কিন্তু ক্রোমোজোম আম্লিক প্রোটিনযুক্ত তাকে মধ্য নিউক্লিয়াস বা মেসোকেরিওটিক কোশ বলে। যেমন- নকটিলিউকা।

বৈশিষ্ট্য:

a) নিউক্লিয়াস সংঘটিত এবং আবরণী বেষ্টিত।

b) কোষ পর্দা থাকে কিন্তু কোষ প্রাচীর থাকে না।

c) ক্রোমোজোম থাকে যা কেবল আম্লিক প্রোটিন দিয়ে গঠিত।

d) সেন্ট্রোমিয়ার থাকে না।

e) রাইবোজোম 80S প্রকৃতির।

f) ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে এবং সালোকসংশ্লেষীয় রঞ্জক ক্লোরোপ্লাস্টের মধ্যে অবস্থান করে।

g) কোষের মধ্যে কোষ অঙ্গানু থাকে না।

3. ইউক্যারিওটিক কোষ:

যে সকল কোষে নিউক্লিয়ারটি সুগঠিত এবং ক্রোমোজোম ক্ষারীয় প্রোটিন যুক্ত ও কোষ বিভাজন মাইটোসিস বা মিয়োসিস পদ্ধতিতে ঘটে তাকে বলে আদর্শ নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষ বা ইউক্যারিওটিক কোষযেমন-সমস্ত উন্নত উদ্ভিদ ও প্রাণী।

ওই

বৈশিষ্ট্য:

a) এই প্রকার কোষের নিউক্লিয়াস টি সুগঠিত অর্থাৎ নিউক্লিয় পর্দা, নিউক্লিওলাস, নিউক্লিওপ্লাজম ও নিউক্লিয় জালক উপস্থিত।

b) কোষ পর্দা ও কোষ প্রাচীর উভয়ই বর্তমান। তবে কোষ প্রাচীর কেবলমাত্র উদ্ভিদ কোষে থাকে।

c) ক্রোমোজোম ঘটিত হয় ও তার ক্ষারীয় প্রোটিনযুক্ত।

d) ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার থাকে।

e) রাইবোজোম 80S প্রকৃতির হয়।

f) উদ্ভিদ কোষের ক্ষেত্রে ক্লোরোপ্লাস্ট এর মধ্যে সালোকসংশ্লেষীয় রঞ্জক থাকে।

g) এই প্রকার কোষে পর্দা করা কোষ অঙ্গানু। যেমন-মাইটোকনড্রিয়া, প্লাস্টিড, গলগি বস্তু, লাইসোজোম ইত্যাদি থাকে

h) উদ্ভিদ কোষে ভ্যাকুওল থাকে, প্রাণী কোষে সাধারণত থাকে না।

শারীরবৃত্তীয় কাজের তারতম্যের ভিত্তিতে বহুকোষী জীবদের কোষগুলি দুই ভাগে বিভক্ত যথা-দেহকোষ এবং জনন কোষ।

a) দেহকোষ(Somatic Cell):

বহুকোশী জীবদেহের যেসব কোষ কেবলমাত্র দেহ গঠনা অংশ নেয়, তাদের দেহ কোষ বা সোমাটিক সেল বলে। এই প্রকার কোষ ডিপ্লয়েড (2n) প্রকৃতির। মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় পুরনো দেহকোষ থেকে নতুন দেহ কোষ সৃষ্টি হয়।

b) জনন কোষ (Reproductive Cell):

বহুকোষী জীবের যেসব কোষ কেবলমাত্র জনন কার্য অংশগ্রহণ করে, তাকে জনন কোষ বা জার্ম সেল বলে। জনন কোষ জনন মাতৃকোষ (2n) থেকে মিয়োসিস প্রক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তাই জনন কোষ হ্যাপ্লয়েড(n) প্রকৃতির। জনন কোষ দু’রকমের যথা-পুং জনন কোষ বা পুং গ্যামেট বা শুক্রাণু এবং স্ত্রী জনন কোষ বা স্ত্রী গ্যামেট বা ডিম্বাণু।[উল্লেখ্য জনন কোষ বা গ্যামেট (শুক্রাণু ও ডিম্বাণু) হল যৌন জননের একক; এবং রেনু হলো অযৌন জননের একক।]

ভাইরয়েড কি?

:-ভাইরয়েড এক প্রকার অতি সূক্ষ্ম অণুবীক্ষণিক, নগ্ন আর.এন.এ. (RNA) সম্বনিত জীব, যার দেহে কোনো খোলক অনুপস্থিত।

ভাইরাস কি?

: এই প্রকার জৈব সংগঠন নিউক্লিক অ্যাসিডের প্রোটিন আবরণ দিয়ে গঠিত।

PPLO বা প্লিওফরফিজম কী?

:-PPLO হলো এক প্রকার মাইক্রোপ্লাজমা বা পরিবর্তনশীল পরিবেশে নিজেদের দেহের আকার ও আকৃতি পরিবর্তন ঘটায় ও নিউমোনিয়া সদৃশ রোগ সৃষ্টি করে তাদের PPLO বা প্লিওফরফিজম বলে।

• অ্যামিবা সর্বদা তার আকৃতি পরিবর্তন করতে পারে।

• সবচেয়ে ছোট কোষ-মাইকোপ্লাজমা গ্যালি সেপটিকাম।

• সবচেয়ে বড় প্রাণী কোষ- মানুষের স্নায়ু কোষ (লম্বায় ১ মিটার)।

• আয়তনে সবচেয়ে বড় প্রাণী কোষ- উট পাখির ডিম।

• সবচেয়ে বড় এককোষী সামুদ্রিক শৈবাল- অ্যাসিটাবুলেরিয়া(Acetebularia)।

কোশপ্রাচীর(Cell Wall):

সমস্ত উদ্ভিদ কোশে কোষ পর্দার বাইরে অবস্থিত যে স্থিতিস্থাপক, ভেদ্য, জড়, মধ্যচ্ছদা ও প্রাথমিক গৌণ প্রাচীর সমন্বিত আবরণকে বলে কোষপ্রাচীর

উৎপত্তি:

কোষ বিভাজনের সময় দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের মাঝের অংশে ফ্রাগমোজোম নামক একপ্রকার পর্দাবৃত থলি গঠিত হয় যা পরবর্তীকালে কোষপট্টো বা সেল প্লেট তৈরি করে। এই সেলক্রেট নানা ধরনের রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে মধ্যচ্ছদায় পরিণত হয়। এই মধ্যচ্ছদার দু’পাশে নতুন কোষ প্রাচীর বস্তু সজ্জিত হয়ে পরিণত কোষ প্রাচীর সৃষ্টি করে।

গঠন:

পরিণত উদ্ভিদ কোষের কোষ প্রাচীর তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। যেমন- a)মধ্যচ্ছদা, b)প্রাথমিক কোষ প্রাচীর বা মুখ্য কোষ প্রাচীর, c)গৌণ কোষপ্রাচীর।

a)মধ্যচ্ছদা:

সংজ্ঞা: পাশাপাশি অবস্থিত দুটি কোষের প্রাথমিক কোষ প্রাচীরের মাঝখানের আবরনটিকে মধ্যচ্ছদা বলে।

মধ্যচ্ছদা কলয়েড জাতীয়, স্থিতিস্থাপক, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম পেকটেট জাতীয়।

b) প্রাথমিক বা মুখ্য কোষপ্রাচীর: মধ্য ছোদার দুই পাশে অবস্থিত, সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ, লিগনিন ও পেকটিন সমন্বিত কোষপ্রাচীরের স্তরকে প্রাথমিক বা প্রধান কোষপ্রাচীর বলে।

c) গৌণ কোষপ্রাচীর: প্রাথমিক কোষপ্রাচীরের ভিতরের দিকে অবস্থিত পুরু, লিগনিন, সুবেরিন ও কিউটিন সম্মানিত স্তরকে গৌণ কোশপ্রাচীর বলে। এই স্তরটি খুব চওড়া হয়।

কোষপ্রাচীরের কাজ:

• কোষের আকৃতি প্রদান করা।

• প্রোটোপ্লাজম কে বাইরে আঘাত হতে রক্ষা করা।

• ইহা ভেদ্য হওয়ায় ইহার দ্বারা জল ও খনিজ লবণ সহজে চলাচল করতে পারে।

• কোষের যান্ত্রিক শক্তি প্রদান করে।

• প্লাজমোডেসমাটার মাধ্যমে কোষান্তর সংযোগ রক্ষায় সহায়তা করে।

• কোষ কে দৃঢ়তা প্রদান করা এবং সংলগ্ন কোষের মধ্যে সাইটোপ্লাজমীয় সংযোগসাধন করা কোষপ্রাচীরের প্রধান কাজ।

প্লাজমোডেসমাটা কি?

:-উদ্ভিদ কোষ প্রাচীরে অবস্থিত কোষীয় সংযোগরক্ষাকারী সাইটোপ্লাজমীয় অংশকে প্লাজমোডেসমাটা বলে।

টেরাস কি?

:- কয়েকপ্রকার কোষে কূপপর্দা চাকরির মত মোটা হয় তাকে টেরাস বলে।

কাইটিন কি?

:- কাইটিন এক প্রকার জৈব বস্তু যা ছত্রাক ও লাইকেনের কোষপ্রাচীরে বর্তমান।

ডেসমোজোম কী?

:- দুটি পাশাপাশি অবস্থিত প্রাণী কোষের কোষ পর্দায় বাইরের দিকে কোষান্তর বস্তু জমা হয়ে যে সংগঠন সৃষ্টি করে যাতে দুটি কোষ যোগ থাকতে পারে তাকে ডেসমোজোম বলে।

কোষ আবরণী বা প্লাজমা পর্দা:

সংজ্ঞা (Definition):

প্রতিটি সজীব কোষের প্রোটোপ্লাজম বাইরের থেকে যে অতি সূক্ষ্ম স্থিতিস্থাপক,প্রভেদক ভেদ্য, লাইপো-প্রোটিননির্মিত ত্রিস্তরীয়(tri-lamellar) সজীব আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে, তাকে প্লাজমা পর্দা বা কোষ পর্দা বলে।

আবিষ্কার(Discovery):

ন্যাগেলি এবং ক্র্যামার এটি প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন এবং প্লোয়ি কোষ পর্দার নামকরণ করেন।

কোষপর্দার উৎপত্তি (Origin of Cell Membrane):

সাইটোপ্লাজম এর বাইরের স্তর পরিবর্তিত ও রূপান্তরিত হয়ে কোষপর্দা গঠিত হয়।

গঠন বৈশিষ্ট্য:

• কোষ পর্দার দুদিকে এক অনুস্তর প্রোটিন থাকে।
• দুটি প্রোটিন স্তরের মধ্যেকার হালকা বর্ণের স্তরটি হল স্নেহ জাতীয় পর্দা বা লিপিড স্তর।
• লিপিড অনুর বাইরের দিকের স্তরটি হল পোলার হাইড্রোফিলিক গ্রুপ অর্থাৎ ইহা জল অনুরাগী।
• হাইড্রোফোবিক গ্রুপটি থাকে লিপিড স্তরের ভেতরের দিকে। অর্থাৎ ইহারা জলবিরাগী হয়।এই দিকটিকে নন পোলার এন্ডও বলে।

কাজ:-

• কোষ মধ্যস্থ সজীব অংশকে রক্ষা করা।
• কোষের আকৃতি প্রদান করা।
• কোশান্তর সংযোগ রক্ষা করা।
• প্রভেদক ভেদ্য পর্দা হিসেবে কাজ করা।
• পিনোসাইটোসিস ও ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে খাদ্য গ্রহণ করা।
• পর্দা সংলগ্ন রাইবোজোম প্রোটিন সংশ্লেষে সহায়তা করা।
• কয়েকপ্রকার কোষ অঙ্গাণু(যেমন-মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বস্তু, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলিয়াম) এবং নিউক্লিয় পর্দা সৃষ্টি করে।
• হরমোন গ্রাহক হিসেবে কাজ করে।
• রাসায়নিক উত্তেজক হিসেবে কাজ করে।
• এটি আবেগ পরিচালন এ সহায়তা করে।
• অনেকক্ষেত্রে কোষ পর্দায় অ্যান্টিজেন ধর্ম বর্তমান।

একক পর্দা কি?(What is an unit membrane?)

:- কোষের যেসব পর্দা প্রোটিন-লিপিড-প্রোটিন (P-L-P) নামক ত্রিস্তর দিয়ে গঠিত, আর তাদের একক পর্দা বলে।

পিনোসাইটস ও ফ্যাগোসাইটস কাকে বলে?

:-কোষপর্দা ভিতর দিকে ভাঁজ হয়ে তরল বস্তু গ্রহণ করার প্রক্রিয়াকে পিনোসাইটোসিস বলে।
আবার কোষপর্দা ভেতরের দিকে ভাঁজ হয়ে কোনো কঠিন বস্তুকে গ্রহণ করার প্রক্রিয়াকে ফ্যাগোসাইটস বলে।

প্রভেদক ভেদ্য পর্দা কাকে বলে?

:-যে পর্দার ভেতর দিয়ে নিয়ন্ত্রিতভাবে দ্রাব ও দ্রাবক অনু চলাচল করতে সক্ষম তাকে প্রভেদক ভেদ্য পর্দা বলে। যেমন-কোষ পর্দা, মাছের পটকা।

অর্ধভেদ্য পর্দা বা অভিস্রবণ পর্দা কাকে বলে?

:-যে পর্দার মধ্য দিয়ে শুধু দ্রাবক অনু চলাচল করতে পারে তাকে অর্ধভেদ বা অভিস্রবণ পর্দা বলে। যেমন-পার্চমেন্ট কাগজ।

প্রোটোপ্লাজম কাকে বলে?

:-কোষ প্রাচীর ছাড়া নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের সমন্বয়ে গঠিত জীবের গঠনগত এককে প্রোটোপ্লাজম বলে। পারকিনজি প্রথম প্রোটোপ্লাজমের নাম দেন।

সাইটোপ্লাজম:

নিউক্লিও পর্দা থেকে কোষ পর্দা পর্যন্ত বিস্তৃত স্বচ্ছ, অর্ধতরল প্রোটোপ্লাজমীয় ধাত্রকে সাইটোপ্লাজম বলে।

টোনোপ্লাজম কাকে বলে?

:-কোষের কোষ গহরকে ঘিরে যে পাতলা স্বচ্ছ সাইটোপ্লাজমীয় পর্দার আস্তরণ বর্তমান তাকে টোনোপ্লাজম বা কোষ গহ্বর পর্দা বলে।

এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা (Endoplasmic Reticulum):

সংজ্ঞা(Definition):

কোশের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত, জালিকাকারে বিস্তৃত, রাইবোজোমযুক্ত বা রাইবোজোমবিহীন অংশকে এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা বলে।

উৎপত্তি(Origin):

এদের উৎপত্তি সম্বন্ধে সঠিক তথ্য অজানা। তবে মনে করা হয় যে কোষ আবরণী বা নিউক্লিয় আবরণী থেকে এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকার সৃষ্টি হয়।

সংখ্যা(Number):

কোশে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম এর সংখ্যা অনির্দিষ্ট। কোষের আয়তন বড় হলে এর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

বিস্তৃতি:

ইহারা সমস্ত উদ্ভিদ প্রাণীকোষে অবস্থিত।

গঠন:

সাধারণত সাইটোপ্লাজমের ধাত্রে ছড়ানো অবস্থায় থাকে। সাইটোপ্লাজমের এন্ডোপ্লাজম অংশে অবস্থান করে বলে এদেরকে এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা বলে। এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকার গায়ে যখন রাইবোজোম সংযুক্ত থাকে না তখন একে মসৃণ এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা বলে (SER) এবং যখন রাইবোজোম যুক্ত থাকে তাকে অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা (RER) বলে।

প্রকারভেদ:

ইহারা সাধারণত তিন প্রকার। যথা-a) সিস্টারনি-লম্বা ও চ্যাপ্টা, b)ভেসিকল-গোলাকার, c) টিউবিউলস-অনিয়মিত বিন্যাসযুক্ত।

কাজ:

• সব এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকার গাত্রে রাইবোজোম অবস্থান করে তারা প্রোটিন সংশ্লেষের সহায়তা করে।
• সাইটোপ্লাজমের কাঠামো তৈরি করে।
• এর পর্দা অভিস্রবণ চাপ নিয়ন্ত্রণ করে। ER বিভিন্ন বিপাকীয় পদার্থকে পৃথক রাখে এবং বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলিকে পৃথক রাখে।
• ER এর চ্যানেল গুলি কোশাভ্যন্তরীয় বিভিন্ন পদার্থকে কোষের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করে।

রাইবোজোম(Ribosome):

সংজ্ঞা:

যে গোলাকার পর্দাবিহীন, কোষীয় উপাদান প্রোটিন সংশ্লেষের সাহায্য করে, যা ক্ষারীয় প্রোটিন ও রাইবোজোমাল RNA (r-RNA) সহযোগে গঠিত হয় তাকে রাইবোজোম বলে।

নামকরণ:

প্যালাডে 1955 খ্রিস্টাব্দে এদের প্রাণী কোষে পর্যবেক্ষণ করেন এবং রাইবোজোম নাম করেন।

বিস্তৃতি:

প্রোক্যারিওটিক কোষে সাইটোপ্লাজমে ছড়ানো থাকে এবং ইউক্যারিওটিক কোষে নিউক্লিয় পর্দা এবং এন্ডোপ্লাজমিক পর্দার গাত্রে লাগানো থাকে।

উৎপত্তি:

রাইবোজোম নিউক্লিয়াসের নিউক্লিওলাস থেকে উৎপন্ন হয়।

গঠন:

• প্রতিটি আদর্শ রাইবজোম r-RNA ও হিস্টোন প্রোটিন সমন্বয়ে গঠিত এবং CO2+ ও Mg2+ থাকে।

• এদের সমস্ত উদ্ভিদ ও প্রাণী কোষে পাওয়া যায়।

• আয়ন রাইবোজোমের দুটি অধঃএকককে যুক্ত রাখে।

• রাইবোজোম দুটি অধঃএকক নিয়ে গঠিত। নিচের বড় অধঃএককটি গম্বুজাকার এবং উপরের অংশ সামান্য অবতল হয়।

• আদর্শ নিউক্লিয় কোষে বড় ও ছোট অধঃএককটির ভর একত্র 80S(60S ও 40S)।

• আদি নিউক্লিয় যুক্ত কোষে বড় ও ছোট অধঃএককটির ভর 70S(50S ও 30S)।

কাজ:

• রাইবোজোমের প্রধান কাজ প্রোটিন সংশ্লেষ করা। এই প্রক্রিয়ায় m-RNA, t-RNA এবং বিভিন্ন উৎসেচকের সহায়তায় বিভিন্ন অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলি রাইবোজোম এর শৃঙ্খলিত হয়ে প্রোটিন গঠন করে। প্রোটিন সংশ্লেষ করায় রাইবোজোমকে প্রোটিন ফ্যাক্টরি বলে।

• সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত মুক্ত রাইবোজোম প্রোটোপ্লাজম গঠনের জন্য বিভিন্ন প্রোটিন সংশ্লেষ করে।

• ER বা নিউক্লিয় আবরণীর গাত্রে অবস্থিত রাইবোজোম বিভিন্ন প্রকার ক্ষরিত প্রোটিন, উৎসেচক ইত্যাদি সংশ্লেষ করে। অর্থাৎ রাইবোজোম কোষের ক্ষরণে সাহায্য করে।

• রাইবোজোম r-RNA সঞ্চয় করে।

• এটি স্নেহ পদার্থের বিপাকে সাহায্য করে।

পলিরাইবোজোম বা পলিজোম কি?

:-যখন কতগুলি রাইবোজোম একে অন্যের সাথে m-RNA এর সাথে যুক্ত হয়ে শৃঙ্খলা আকারে সজ্জিত হয়ে অবস্থান করে তাকে পলিরাইবোজোম বা পলিজোম বলে।

রাইবোজোম পর্দাবিহীন অঙ্গানু, প্রোটিন সংশ্লেষের মূলত সহায়তা করে।

ভেদবার্গের একক কি?

:- ভেদবার্গের একক বলতে বিজ্ঞানী ভেদবার্গের(Svedberg) নামের আদ্যাক্ষর অনুসারে ‘S’ বোঝানো হয়।

সেন্ট্রিফিউজ নামক যন্ত্রের দ্বারা কেন্দ্রাতিক ঘূর্ণন বলের দ্বারা বিভিন্ন ভরসম্পন্ন বস্তুর অধঃক্ষেপণের হারকে ভেদবার্গের একক বলে।

ইনফরমোজোম কাকে বলে?

:-যে কোষীয় উপাংশ নিউক্লিয়াস হতে বার্তা সাইটোপ্লাজমে পরিবহন করে এবং যা m-RNA ও ক্ষারীয় প্রোটিন সমন্বয়ে গঠিত তাকে ইনফরমোজোম বলে।

মাইট্রোকন্ডিয়া:

সংজ্ঞা:

কোষের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত, আত্মপ্রজননশীল, দ্বিপর্দাবৃত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দণ্ডকার শ্বসনে সাহায্যকারী অঙ্গানুকে মাইটোকনড্রিয়া বলে।

গঠন:

• মাইটোকন্ডিয়া দুটি একক পর্দা বেষ্টিত। বাইরের পর্দাকে বহিঃপর্দা ও ভিতরের পর্দাকে অন্তঃপর্দা বলে।

• অন্তঃপর্দার ভিতরে অবস্থিত ধাত্রকে ম্যাট্রিক্স বলে।

• আন্তঃআবরণীর ভিতরে অবস্থিত অনিয়মিত ভাঁজযুক্ত আঙ্গুলের ন্যায় প্রবর্ধককে ক্রিস্টি বলে।

• আন্তঃআবরণীর ক্রিস্টি অংশে ধাত্রের দিকে অসংখ্য টেনিস রেকেট এর মত বস্তু সমান দূরত্বে অবস্থিত। একে F1 বস্তু বা ফার্নান্ডেজ-মোরান অধঃএকক বা অক্সিজোম বলে।

• এই F1 বস্তু তিনটি অংশে বিভক্ত।যেমন-পাদখন্ড, বৃন্ত ও মুন্ডু। মুন্ডু অংশে ATP সংশ্লেষকারী উৎসেচক বর্তমান।

কাজ:

• শ্বসন প্রক্রিয়ায় ক্রেবসচক্রের প্রয়োজনীয় বিক্রিয়া পরিচালনা করে।

• মাইট্রোকন্ডিয়াতে ATP অনুসংশ্লেষিত হয় বলে মাইটোকনড্রিয়াকে কোষের শক্তিঘর বলে।

• ক্রেবস চক্রের অন্তর্বর্তী যৌগ থেকে গ্লুটামিক অ্যাসিড, অ্যাসপারটিক অ্যাসিড সংশ্লেষ ঘটে।

• ফ্যাটি অ্যাসিড সংশ্লেষ এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের বিটা-জারণ গঠিত হয়।

• শীতঘুম-প্রাণীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তাপ উৎপাদনে সাহায্য করে।

মাইটোকনড্রিয়াকে অর্ধ-স্বনির্ভর অঙ্গানু(Semi-autonomous organelle)বলা হয় কেন?

:-মাইট্রোকন্ডিয়াকে অর্ধ স্বনির্ভর অঙ্গানু বলা হয় কারণ– a) নিজস্ব গোলাকার, পেঁচানো, দ্বিতন্ত্রী DNA (mt DNA) বর্তমান। b) সমস্ত প্রকার RNA- r-RNA, m-RNA এবং t-RNA বর্তমান। c) অসংখ্য রাইবোজোম বর্তমান যাদের মাইটোরাইবোজোম বলে। d) প্রোটিন সংশ্লেষের সক্ষম, কিছু উৎসেচকের উৎপাদন সংশ্লেষ করে। e) স্ব-প্রজননশীল।

 

Leave a comment