বায়ুমণ্ডলের তাপ, উষ্ণতা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন || The Cause of Global Warming

বায়ুমণ্ডলের তাপ, উষ্ণতা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন || The Cause of Global Warming

The Cause of Global Warming: আজ আপনাদের সামনে ভূগোল একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রপিক বিশ্ব উষ্ণায়ন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। সমস্ত পরীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে থাকে।

The Cause of Global Warming

ইনসোলেশন:

সূর্যের বাইরের অংশের তাপ প্রায় ৬০০০°সে. । সূর্যের মোট তাপ শক্তির ২০০ কোটি ভাগের একভাগ ক্ষুদ্র তরঙ্গের আকারে প্রতি সেকেন্ডে ২,৯৭,০০০ কিলোমিটার বা ১,৮৬,০০০ মাইল বেগে পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। একেই বলে সূর্য রশ্মির তাপীয় ফল বা ইনসোলেশন(Isolation)

সূর্য রশ্মির তাপীয় ফল বা ইনসোলেশনের নিয়ন্ত্রক গুলি হল:- ১) সূর্যরশ্মির পতনকোণ, ২) দিবাভাগের দৈর্ঘ্য, ৩) সৌরধ্রুবক, ৪) সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব, ৫) আবহমন্ডলের স্বচ্ছতা, ৬) সৌরকলঙ্ক প্রভৃতি।

আরও পড়ুন:- ওজোন স্তর কি? এর বিনাশের কারণ কি?

অ্যালবেডো কি?

উঃ-সূর্য থেকে আগত মোট শক্তির ২০০ কোটি ভাগের এক ভাগ পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। এই শক্তিকে যদি ১০০ শতাংশ ধরা হয়, তার ৩৪ শতাংশ শক্তি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল কে উত্তপ্ত না করে মহাশূন্যে ফিরে যায়। এই ৩৪ শতাংশ শক্তিকে অ্যালবেড বলে। অ্যালবেডো সবচেয়ে বেশি মেঘ থেকে (২৫%) এবং সবচেয়ে কম স্থলভাগ থেকে (২%) বিক্ষিপ্ত হয়। আর পৃথিবীপৃষ্ঠে তুষারবৃত অঞ্চলে অ্যালবেডো সর্বাধিক হয়।

বিশ্ব উষ্ণায়ন-গ্রিন হাউস গ্যাসের ভূমিকা:

কয়েক দশক ধরে জ্বালানি খনিজের ব্যবহার ও অরণ্য ধ্বংস বাড়ার কারণে বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাস বাড়ছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ভূমিকা সর্বাধিক। উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠের প্রতিফলিত রশ্মি গ্রিন হাউজ গ্যাস দ্বারা নিম্ন বায়ুমন্ডলে শোষিত হওয়ায় এখানকার তাপমাত্রার অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।

গ্রীন হাউসের জন্য দায়ী গ্যাস গুলি হল:

কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), ওজোন(O3), জলীয় বাষ্প(H2O), মিথেন(CH4), নাইট্রাস অক্সাইড (N2O), ক্লোরোফ্লুরোকার্বন(CFC)।

আরও পড়ুন:- বায়ুমণ্ডলের উপাদান ও বিভিন্ন স্তর সমূহ 

গ্রিনহাউস ইফেক্ট কি?

উঃ-শীতপ্রধান দেশে যে কাচের ঘরে ফুল, ফল, সবজি ইত্যাদি চাষ করা হয়, তাকে গ্ৰিনহাউস বা সবুজঘর বলে। এই কাঁচের ঘরে সূর্য থেকে আগত তাপ বিকৃত হয়ে আর মহাশূন্যে ফিরে যেতে পারে না।
তেমনি কার্বন-ডাই-অক্সাইড, CFC ইত্যাদি গ্যাসের আধিক্য হলে পৃথিবী থেকে সূর্যের তাপ বিকিরিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যেতে পারে না। ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বেড়ে যায়। এই ঘটনাকে গ্রিন হাউস ইফেক্ট বলে। এই নামকরণ করেন জ্যঁ ব্যাপটিস্ট জোসেফ ফুরিয়ার।

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব:

১) বরফের গলন: সমগ্র বিশ্বের উষ্ণতা অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ার প্রভাবে মেরু প্রদেশের বরফ গলছে। বরফ গলনে এশিয়ার উত্তরবাহিনী নদীগুলির বন্যা প্রবণতা বাড়ছে। পশ্চিম আন্টার্কটিকার বরফের চাদর প্রতিবছর ৪০০ ফুট করে ডুবছে। ১৯৯৫ সালেই আন্টার্কটিকার LARSEN ICE SHELF গলে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা গ্লেসিয়াল পার্কেও কেউ বেশ কিছু হিমবাহ গলে গেছে। আলাস্কার বেরিং হিমবাহ গলতে শুরু করেছে। পার্বত্য হিমবাহের গলনও দ্রুতহারে বাড়ছে।

২) সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি: গত ১০০ বছরে হিমবাহের গলনে সমুদ্র জলের উচ্চতা প্রায় ১০-২৫ সেমি বেড়েছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা এই শতাব্দীতে উচ্চতা আরও ১৫ সেমি থেকে ১ মিটার বাড়বে। এই অবস্থায় বেশ কিছু দ্বীপ ও উপকূল সমুদ্র জলের তলায় ডুবে যাবে। জলতল এক মিটার বাড়লে মিশরের শতকরা ১ ভাগ ভূমি, নেদারল্যান্ডের শতকরা ৮ ভাগ, বাংলাদেশের শতকরা ১৭.৫ ভাগ এবং মার্শাল দ্বীপের শতকরা ৮০ ভাগ অংশ জলের তলায় চলে যাবে।

৩) অধঃক্ষেপণের প্রকৃতিগত পরিবর্তন: উল্লেখযোগ্য প্রকৃতিগত পরিবর্তনগুলি হলো-ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত কমছে, ঘূর্ণি বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তর গোলার্ধের আর্দ্র অঞ্চল গুলির আর্দ্রতা বাড়ছে এবং শুষ্ক অঞ্চলগুলির শুষ্কতা বাড়ছে। বিশ্ব উষ্ণায়নে অম্ল বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ছে।

৪)শস্য উৎপাদনের হ্রাস বৃদ্ধি: বিশ্ব উষ্ণায়নের শস্য উৎপাদন হ্রাস পায় কারণ- উত্তাপ বাড়ায় গাছের সালোকসংশ্লেষের মাত্রা বেড়ে উৎপাদন হ্রাস পায়, অতিরিক্ত উষ্ণতায় কখনো কখনো ফসল উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়।

৫)কৃষি পদ্ধতির পরিবর্তন: শুষ্কতা বাড়ায় তৃণের চাষ ও পশু পালন করা হয়। অধিক বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে ভেড়ি নির্মাণ করে মাছের চাষ করা হয়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে গ্রীষ্মে বোরো ধানের চাষ হয়। ব্যাপক কৃষির জায়গায় মিশ্র কৃষি বাড়ছে। আর ফসল উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার ব্যাপারও ঘটছে।

৬)পৃথিবীতে আগত ও বিকিরিত তাপের বৈষম্য: আগত ও বিকিরিত তাপের বৈষম্যের কারণগুলি হল- গ্রিনহাউস গ্যাস ও দূষক পদার্থ বায়ুমন্ডলে উপস্থিত থেকে ক্ষুদ্র তরঙ্গ রশ্মির আগমনে বাধা দেয়। গ্রীন হাউজ গ্যাস এবং জলীয়বাষ্প পার্থিব রশ্মিকে মহাশূন্যে ফিরতে বাধা দিয়ে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে।

 

 

Leave a comment