বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু || wb primary child phychology

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের অর্থবোধ || wb primary child phychology

 

wb primary child phychology

বিশেষ চাহিদার যুক্ত শিক্ষার্থী (Learners with Special Needs):

1. দৈহিক, মানসিক, সামাজিক বা প্রাক্ষোভিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে যে সমস্ত শিশু সাধারণ শিশুদের থেকে পৃথক তাদের ব্যতিক্রমী শিশু বলা হয়।
2. শিক্ষা মনোবিদ্যায় বুদ্ধাঙ্কের দিক থেকে যারা স্বাভাবিকের তুলনায় পৃথক তারা হলো ব্যতিক্রমধর্মী শিশু।
3. স্বাভাবিক সম্ভাবনার লেখচিত্রে যদি একদল শিক্ষার্থীকে যেকোনো বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস করা যায় তাহলে যারা বন্টন এর মাঝে অংশে থাকে, তাদের বলা হয় স্বাভাবিক। যারা এই মাঝের অংশের বাইরের দুদিকে থাকে তাদেরই বলা হয় ব্যতিক্রমধর্মী শিশু।
4. প্রচলিত শ্রেণী-শিক্ষণ ব্যবস্থাই যে ধরনের শিক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় তাতে স্বাভাবিক(গড় মানসম্পন্ন) শিশুরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়। ব্যতিক্রমীরা যথেষ্ট অবহেলিত হয়ে থাকে।

সৃজনক্ষমতা (Creativity):

1. সৃজন ক্ষমতা হলো অপসারী চিন্তন ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত কতগুলি বৌদ্ধিক ও ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়, যাদের সমবেত প্রভাবে ব্যক্তি তার কর্মফলে সম্পূর্ণভাবে অভিনবত্ব প্রকাশ করে।
2. অভিনবত্ব এবং সৃজনশীলতা সমতুল্য।
3. প্রতিভাবান শিশু চিহ্নিত করা হয় IQ-এর বিচারে কিন্তু সৃজনশীল শিশু চিহ্নিত করা হয় ব্যক্তিসত্তার সংলক্ষণের উপর ভিত্তি করে।
4. সৃজনশীলতা ও বুদ্ধি স্বাধীনভাবে কাজ করলেও সৃজনশীলতার জন্য বুদ্ধির একটি বিশেষ স্তর প্রয়োজন।
5. অপসারী চিন্তন ক্ষমতাই হল সিজন ক্ষমতা।
6. অপসারী চিন্তনের প্রয়োজন হয় নতুন কিছু উদ্ভাবনের জন্য।

সৃজনক্ষমতার প্রকৃতি (Nature ):

1. সৃজনক্ষমতার সূচক হল অভিনবত্ব।
2. সৃজনাত্মক কাজ হলো সৃজনাত্মক চিন্তন ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।
3. সৃজনক্ষমতা সৃজনাত্মক কল্পনের মধ্যে প্রকাশ পায়।
4. সৃজনক্ষমতার কতগুলি মৌলিক বৈশিষ্ট্য আছে।
5. সৃজন ষক্ষমতার কেন্দ্রীয় উপাদান হলো বিশেষ ধরনের সংযোগ মূলক স্বাধীনতা প্রকাশের ক্ষমতা।
6. সৃজনক্ষমতা ও বিদ্যালয় পারদর্শিতা পরস্পরের উপর নির্ভরশীল নয়।
7. সৃজনশীল ব্যক্তিরা মুক্ত চিন্তা করতে পারেন এবং নতুন সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নিজের চিন্তার ফলকে প্রকাশ করতে পারেন।
8. সৃজনশীল ব্যক্তির প্রাক্ষোভিক অস্থিরতা থাকে।
9. সৃজনশীল ব্যক্তি শিল্পধর্মী, আবেগপ্রবণ ও নতুনের সন্ধানী।
10. সৃজনশীল শিশুরা অন্তর্মুখী হয় এবং সেই কারণে সমাজের থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন থাকে।
11. বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
• সমস্যার প্রতি সংবেদনশীল।
• ভাবনা ও পরিবেশনে নমনীয়।
• আবেগপ্রবণ।
• লাজুক প্রকৃতির এবং অন্তর্মুখী হয়।
• বাচনভঙ্গিতে সাবলীল।
• নিজের প্রাধান্য প্রকাশ করে।
• কোন বিষয়ের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি আগ্রহ প্রবণতা।
12. কোন কোন ক্ষেত্রে সৃজনশীল ব্যক্তিদের মানসিক রোগের প্রণতা অপেক্ষাকৃত বেশি।

সৃজনক্ষমতার উপাদান (Characteristics):

1. ক্ষিপ্রতা(fluency)(দ্রুত চিন্তন ক্ষমতা)
2. নমনীয়তি(flexibility)( এমন অবস্থা যেখানে চিন্তন ধরাবাঁধা নিয়ম মেনে চলে না)
3. স্বকীয়তা(Originality)(নিজস্বতা/মৌলিকত্ব)
4. কৌতুহল প্রবণতা(Curiosity)
5. পরিবর্তনশীলতা(Transformation)(পূর্বের কোন ধারণাকে নবকলেবরে উপস্থাপন)
6. সম্প্রসারণ ক্ষমতা(elaboration)(সামান্য উপকরণ দিয়ে অভিনব কিছু করার ক্ষমতা)
7. মূল্যায়ন ক্ষমতা (Ability to evaluate)(নতুন কর্মসম্পাদনের পর সত্যতা বিচার)

সৃজনক্ষমতার চিহ্নিত করণ (Indentification):

1. সৃজনশীল ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক কর্মচিন্তা নিয়ে সচেতন থাকে।
2. বাচনভঙ্গি ও চিন্তনে সাবলীলতা।
3. একাকী থাকতে ভালোবাসে।
4. বৈচিত্রের মধ্যে সমন্বয়সাধন করতে পারে।
5. অন্যের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে স্বাধীন ও স্বনির্ভর হয়।
6. খোলামেলা মুক্ত পরিবেশ পছন্দ করে।
7. এরা অপসারী চিন্তন থেকে অভিসারী চিন্তায় মগ্ন হতে পারে।
8. কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরা নারীসুলভ অনুরাগ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
9. এরা সংস্কারমুক্ত, অত্যধিক আবেগপ্রবণ ও ব্যক্তিগত প্রাধান্য প্রকাশ করতে ভালোবাসে।
10. এরা নিজেদের আত্মবিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি গভীর আস্থাশীল, সাধারণ ঘটনা কেউ নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে।

সৃজনক্ষমতার পরিমাপ (Estimation):

1. অ-অভীক্ষামূলক কৌশল- পর্যবেক্ষণ, সাক্ষাৎকার, রেটিং স্কেল ইত্যাদি।
2. অভীক্ষামূলক কৌশল- ব্যক্তিত্ব পরিমাপক অভীক্ষা, প্রবণতার অভীক্ষা, আগ্রহের অভীক্ষা, প্রতিফলন অভীক্ষা ইত্যাদি।

সৃজনক্ষমতার বিকাশে শিক্ষকের ভূমিকা (Role of a teacher in the development of creativity):

1. আগ্রহের সঞ্চার ও চিন্তনে উৎসাহ দান।
2. অভিনব চিন্তনে উৎসাহ দান।
3. সহানুভূতির সঙ্গে স্বাধীন মতামতের ওপর গুরুত্ব দান।
4. সংগতিবিধান সহায়তা করা।
5. ব্রেনস্টর্মিং- শিক্ষার্থীর মস্তিষ্কের সমস্যা দিয়ে আঘাত করা। শিক্ষার্থীর কোন ধারণাকে মূল্যায়ন করার পরিবর্তে তার ধারণা সৃষ্টিতে সহায়তা করতে হবে।
6. পাঠদানের মূলনীতি হবে আবিষ্কারের পরিবেশ তৈরি করা যেখানে শিক্ষার্থীর আবিষ্কারকের ভূমিকা নেবে।

ক্ষীণ বুদ্ধি সম্পন্ন শিশু (Feeble minded):

• যেসব শিশুর বুদ্ধ্যঙ্ক ৭৫ এর নিচে তাদের ক্ষীন বুদ্ধি সম্পন্ন শিশু বলা হয়।

ক্ষীণ বুদ্ধি সম্পন্ন শিশুদের বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

1. দৈহিক বিকাশের হার স্বাভাবিক শিশুর তুলনায় অনেক কম।
2. বিভিন্ন অঙ্গের বিকৃতি/অসামঞ্জসতা দেখা যায়।
3. ভাষার বিকাশ ধীরগতিতে হয়।
4. উচ্চারণগত ত্রুটি।
5. কৌতূহল প্রবণতা খুবই কম।
6. জানার আগ্রহ, উৎসাহ, উদ্দীপনা খুবই কম।
7. শিক্ষাগত অনগ্রসরতা।
8. অনুরাগের ক্ষেত্র সীমিত।
9. কম বয়সের শিশুদের সঙ্গে মেলামেশা।
10. বয়স অনুপাতে প্রাক্ষোভিক বিকাশ কম।
11. মনোযোগের পরিসর কম।
12. স্বল্প মানসিক ক্ষমতা।
13. অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়া, এনামুন্নতাই বুকে এবং সামাজিকভাবে অপরাধ প্রবণ হয়ে পড়া।
14. পিতামাতার যৌনব্যাধি, অতিরিক্ত ড্রাগ সেবন বা বিশেষ রোগের কারণে জড় বা ক্ষীণবুদ্ধি সম্পন্ন শিশু জন্ম।

ক্ষীণ বুদ্ধি সম্পন্ন শিশুদের শ্রেণীবিভাগ:

ক্ষীন বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদের তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে-

1. জড় বুদ্ধি:

• এদের IQ ~ 0-25 হয়।
• এরা শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের অযোগ্য।
• মানসিক বয়স <2 বছর।
• নানা ধরনের দৈহিক বিকৃতি দেখা যায়।
• মুখ দিয়ে লালা পড়ে, চোখের কোনে পিচুটি জমে থাকে।
• স্বল্পায়ুবিশিষ্ট হয়।
• লেখাপড়া বা বৃত্তিমূলক কোনো কাজ শেখানো যায় না।

2. নির্বোধ/বোধহীন:

• IQ ~26-50 হয়।
• শিক্ষণ অযোগ্য।
• প্রশিক্ষণযোগ্য।
• এদেরও দৈহিক বিকৃতি লক্ষ্য করা যায়।
• কৌতূহল ও মনঃসংযোগের ক্ষেত্রে ক্ষমতাহীন।
• যত্ন নিয়ে শেখালে নিজে পোশাক পরিচ্ছদ করতে পারে, স্নান করতে পারে, খেতে পারে।
• এদের মস্তিষ্কের কোষ গুলির নষ্ট হওয়ার কারণে বুদ্ধি বিনষ্ট হয়।

3. স্বল্পবুদ্ধি:

• IQ ~ 51-75 হয়।
• শিখন ও প্রশিক্ষণযোগ্য।
• মনোযোগের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ।
• উৎসাহ ও উদ্দীপনা কম।
• চিন্তাভাবনা অসংলগ্ন।
• সাধারণ শিক্ষায় এরা সাফল অর্জন করতে পারে না।
• বৃত্তিমূলক কাজ করতে পারে।
• পিটুইটারি ও অন্যান্য গ্রন্থির রসক্ষরণের ত্রুটি থাকতে এদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটে না।
• শিক্ষাগত দিক থেকে এই শিশুরা সাধারণের চেয়ে প্রায় ২ বছর পিছিয়ে থাকে।

জড় বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা(Education of custodial mentally retarded):

1. সঞ্চালন মূলক ক্ষমতার বিকাশের জন্য শিক্ষাদান।
2. এরা চিরদিন পরনির্ভর হয়ে থাকে।

বোধহীনদের শিক্ষা( Education of trainable mentally retarded):

1. ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন বিকাশের জন্য শিক্ষাদান।
2. ব্যক্তিগত আচরণ- যেমন- মুখ ধোয়া, পোশাক পরিচ্ছদ পরা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ইত্যাদি যত্ন সহকারে শেখানো।
3. বৃত্তিকেন্দ্রিক পাঠ্যক্রমের ব্যবস্থা।
4. বেশি বয়স পর্যন্ত ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।
5. ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা/দলগত কাজের মাধ্যমে শিক্ষাদান/সংগীতের মাধ্যমে শিক্ষাদান।

স্বল্পবুদ্ধি সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা (Education of educable mentally retarded):

1. ব্যক্তিগত পদ্ধতিতে শিক্ষাদান।
2. আত্মসক্রিয়তার দ্বারা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষাদান।
3. বিষয়বস্তুর পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষা।
4. বৃত্তিকেন্দ্রিক পাঠ্যক্রম।
5. শিক্ষাকাল কমানো।
6. অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষা।
7. ত্রি-ধারা পদ্ধতিতে শিক্ষাদান।

অনগ্রসর বা ধীর শিশু (Backward or Slow Learners):

• যেসব শিশু শ্রেণীর সাধারণ অবগতির ধারা থেকে পিছিয়ে থাকে তারা হলো অনগ্রসর শিশু।
• অনেকের মতে অনগ্রসর ও ক্ষীর বুদ্ধি শিশুদের মধ্যে পার্থক্য নেই, কিন্তু বুদ্ধির অভাব অনগ্রসতার একমাত্র কারণ নয়।
• যেসব শিশু তাদের বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক শিক্ষা স্তরের এক বছর নিচের জন্য যোগ্য নয় তারাই অনগ্রসর।

বৈশিষ্ট্য(Characteristics):

1. কোনো বিষয় শিখতে এরা সাধারন থেকে বেশি সময় নেয়।
2. স্মৃতিশক্তি দুর্বল, বেশিক্ষণ মনোযোগ দিতে পারে না, সহজে পাঠ ভুলে যায়।
3. আগ্রহ খুব কম, অন্যের সাহায্যও নিতে চায় না।
4. শিক্ষক ও সহপাঠীদের প্রতি এদের প্রাক্ষোভিক প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক হয় না।

অনগ্রসতার কারণ(Reasons behind slow learning):

1. বুদ্ধির অভাব।
2. কঠিন রোগ, দৃষ্টির ক্ষীণতা, কানে কম শোনা, অর্জিত দৈহিক অভ্যাস।
3. প্রাক্ষোভিক ভারসাম্যের অভাব (রাগ, অভিমান, ভয়, দুশ্চিন্তা পাঠ তৈরির পক্ষে অন্তরায় হয়ে থাকে)।
4. অসুস্থ গৃহ পরিবেশ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহ, দারিদ্র, পড়াশোনায় উপযুক্ত পরিবেশের অভাব।
5. অনুপযুক্ত বিদ্যালয় পরিবেশ।
6. অবাস্তব পাঠ্যক্রম।
7. বিদ্যালয়ের কৃত্রিম কঠোর শৃঙ্খলা।
8. শিক্ষকদের সহানুভূতির অভাব।
9. সহপাঠীদের আচরণ।

অনগ্রসরতা ও শিক্ষা (Slow learning and education):

1. সংস্কারমূলক শিক্ষণ।
2. উপযুক্ত শিক্ষা সহায়ক প্রদীপনের ব্যবহার।
3. দৈহিক অসুবিধা জনিত চিকিৎসার ব্যবস্থা।
4. শিক্ষক অভিভাবক সমিতির আয়োজন।
5. সৌহার্দ্যমূলক বিদ্যালয় পরিবেশ।
6. শিক্ষক এই সমস্ত শিশুদের ছোটো ছোটো ধাপে শেখাবেন।
7. উদ্বোধকের ব্যবহার, এদের যেকোনো কৃতকার্যের জন্য সঙ্গে সঙ্গে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা।
8. স্কিনারের অপারেন্ট কন্ডিশনিং নীতির অনুসরণে প্রোগ্রামবদ্ধ শিখন ও শিক্ষনের উদাহরণ সমূহের ব্যবহার।

জ্ঞানেন্দ্রিয়ের দিক থেকে অসমর্থ শিশু (Sensory Impairment):

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী/দর্শন জনিত অসমর্থতা:

• শিক্ষাগত দিক থেকে যে সমস্ত শিশুরা দর্শন ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে শিক্ষলাভ করতে পারে না তাদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলে।
• যে সমস্ত ব্যক্তির দৃষ্টি তীক্ষ্ণতা 6/60 (মিটার এককে) বা 20/200 (ফুট এককে) এর বেশি নয় বা দৃষ্টিক্ষেত্র 20° বা তার চেয়ে কম তাদের বলা হয় অন্ধ বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।
• যাদের দৃষ্টি তীক্ষ্ণতা 20/200 এর বেশি কিন্তু 20/70 এর কম (ফুট এককে) তারা হল স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন।

অন্ধতার কারণ(Reasons behind blindness):

1. বংশগত বিভিন্ন রোগ (জন্মগত বা শৈশবে ছানি, শৈশবে ডায়াবেটিস, রেটিনোব্লাস্টোমা ইত্যাদি)।
2. চোখের মনি অত্যধিক ছোট হলে বা চোখের পেশী সঞ্চালনজনিত ত্রুটি থাকলে।
3. গর্ভকালীন সময়ে মা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে (যেমন- গুটি বসন্ত, গনোরিয়া, রুবেলা, সিফিলিস ইত্যাদি)।
4. পিতা মাতার রক্তের শ্রেণীগত ত্রুটি।
5. শিশুর জন্মগত ত্রুটি (স্বাভাবিকের চেয়ে ওজন কম হলে, জন্মকালীন কনজাংটিভাইটিস, কর্নিয়াতে আলসার)।
6. ভিটামিন-A এর অভাব, দুর্ঘটনাজনিত মস্তিষ্কে আঘাত, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
7. চোখের রোগ যেমন ছানি, গ্লুকোমা, ট্র্যাকোমা, সায়োপিয় জেরপথ্যালমিয়া ইত্যাদি।
8. তীব্র মানসিক আঘাত বা অবদমনের ফলে সাময়িক অন্ধতা দেখা দেয়।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিতকরণ (Identification):

1. ঘন ঘন চোখ রগড়ায়।
2. চোখের খুব কাছে বই বা খাতা নিয়ে পড়ে।
3. রাতে কম দেখে।
4. চোখ লাল হয়ে ফুলে ওঠে।
5. বিভিন্ন রং আলাদা করে চিনতে পারে না।
6. চোখের কর্নিয়া অস্বচ্ছ হয়।
7. স্বাভাবিক আলোতেও তাকাতে অসুবিধা হয়।
8. তারারন্ধ্রের মাঝখানে সাদা দাগ দেখা যায়।
9. এক চোখ বন্ধ করে অন্য চোখে দেখার চেষ্টা করে।
10. দূরের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পায় না।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা ও শিক্ষা (Visual impairment and education):

1. ‘ব্রেইল’ পদ্ধতিতে শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
2. বিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করা।
3. ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে শিক্ষা।
4. অ্যাবাকাস পদ্ধতিতে শিখনের ব্যবস্থা।
5. দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেওয়া ও পরিবেশ পরিচিতি ও হাটার কৌশলে প্রশিক্ষণ দেওয়া।

শ্রবণজনিত অক্ষমতা(Hearing Impairment):

যে সমস্ত ব্যক্তির শ্রবণযন্ত্রের সাহায্যে বা সাহায্য ছাড়া সাধারণত ৭০ ডেসিবল এর শব্দ শুনতে অক্ষম তাদের বলা হয় শ্রবণ প্রতিবন্ধী বা বধির।
• স্বল্প ব্যাহত শ্রুতিসম্পন্ন শিশুদের শব্দ শোনার তীব্রতা 26-40 ডেসিবল।
• গুরুতর ব্যাহত শ্রুতিসম্পন্ন শিশুদের শব্দ শোনার তীব্রতা 41-80 ডেসিবল।
• পূর্ণ বধির শিশুদের শব্দ শোনার তীব্রতা 780 ডেসিবল।
• জন্মগত বধীরতা দূর করা যায় না।
• আকস্মিক বধিরতা চিকিৎসার দ্বারা অনেকটাই সারানো যায়।
• আকস্মিক বধিরতার কারণ- হাম, ডিপথেরিয়া, গলা বা নাকের রোগ।

শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

1. যোগাযোগে অক্ষম-অসহায় বোধ করা।
2. বেশিরভাগ সময় মনমরা হয়ে থাকা।
3. অপরের মুখভঙ্গি বা ঠোঁট নাড়ানো দেখে অনেক কথা অনুমান করে নিতে পারা।
4. অনেক সময় এরা মানসিক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়।

শ্রবণ প্রতিবন্ধীকতা ও শিক্ষা (Hearing Impairment and education):

1. যান্ত্রিক কৌশলের ব্যবহার(শ্রবণ যন্ত্রের ব্যবহার)।
2. বিশেষ ধরনের বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা।
3. শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের সামনে শারিতে এনে বসানো।
4. বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।
5. শিক্ষকের সহানুভূতি ও সহপাঠীদের সহযোগিতা।

শারীরিক প্রতিবন্ধী (Physically Disabled):

• যারা জন্মগতভাবে বিকলাঙ্গ বা আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনায় অঙ্গ হারিয়েছে তাদের শারীরিক প্রতিবন্ধী বা বিকলাঙ্গ বলা হয়।
• বিকলাঙ্গ শিশুরা অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুদের মতো বুদ্ধি ও মানসিক শক্তির অধিকারী। সাধারণত এদের মধ্যে কোন শিখন প্রতিবন্ধকতা দেখা যায় না।
• অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক বিকলাঙ্ক তার কারণে মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
• চলন সংক্রান্ত অক্ষমতা- জন্মগত/দুর্ঘটনা জনিত কারণ বা পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে চলাফেরা ও সঞ্চালন ক্ষমতা হারিয়ে যায়।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও শিক্ষা(Physical disability and education):

1. শারীরিক অক্ষমতার প্রকৃতি অনুযায়ী শিক্ষার ব্যবস্থা।
2. বিকলাঙ্গতা কম হলে সাধারণ বিদ্যালয়ের পরিবেশে শিক্ষা ব্যবস্থা।
3. যাদের বিকলাঙ্গতার কারণে মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয় তাদের বিশেষ বিদ্যালয়ের শিক্ষার ব্যবস্থা।
4. সাহিত্যচর্চা, সংগীতচর্চা বা গবেষণামূলক কাজে নিয়োগ- এই জাতীয় কাজে কায়িক পরিশ্রম কম হয়।
5. Occupational Therapy-র মাধ্যমে বিভিন্ন বৃত্তিতে নিয়োগ।

তোতলামি (Stammering):

তোতলামির লক্ষণ ( Symptoms):

1. বাক্য বা শব্দ উচ্চারণে অস্পষ্টতা।
2. দুটি শব্দের মাঝে বেশি সময় নেওয়া।
3. কোনো একটি শব্দ বলতে বেশি সময় নেওয়া।
4. একটি শব্দ বারবার বলা।

তোতলামির কারণ (Reasons):

1. জন্মগত কারণ বা আকস্মিক রোগ জনিত কারণ।
2. জন্মের সময় ঠোঁট কাটা বা তালু বিভক্ত থাকা।
3. ভারী জিহ্বা, দুটো দাঁতের মধ্যে বেশি ফাঁক।
4. অতিরিক্ত উত্তেজনা বা মানসিক অন্তর্দ্বন্দ্ব।

শিক্ষকের ভূমিকা (Role of a teacher):

1. স্বাভাবিক শিশুদের সঙ্গে শিক্ষাদান।
2. অভ্যাস ও সংকোচহীন অনুশীলন।
3. মানসিক নিরাপত্তা।
4. শিক্ষকের উৎসাহ ও সহানুভূতিপূর্ণ ব্যবহার।

স্নায়বিক প্রতিবন্ধী (Neurologically Disabled):

শিশু মস্তিষ্কের অংশ বিশেষের পক্ষে খাতের জন্য দেহের কিছু পেশিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এদের মস্তিষ্কের পক্ষাঘাতজনিত অক্ষমতা লক্ষ্য করা যায়।
• Autistic Child-শিশুর ভাষার ব্যবহার ও সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অক্ষম।
• প্রজ্ঞামূলক সমস্যা (Cognitive disorder)-এই জাতীয় শিশুদের মধ্যে অতিচঞ্চলতা দেখা যায়। এরা কোনো কাজেই মনোযোগ দিয়ে পারে না। এদের পঠন-পাঠন ও শিক্ষা ব্যাহত হয়।

শিখন প্রতিবন্ধকতা (Learning Disability):

• শিশুর শিখন সংক্রান্ত অক্ষমতা যখন তার মৌলিক ও লিখিত ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বা অর্থ অনুধাবনের ক্ষেত্রে দেখা যায় তখন তাকে শিখন প্রতিবন্ধী বলা হয়।
• মনোযোগ, চিন্তা, কথা বলা, পাঠ করা, বানান করা, লেখা বা গাণিতিক সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়ে শিখন অক্ষমতা প্রকাশ পায়।
• শিখন অক্ষমতাকে লুক্কায়িত অক্ষমতা hidden disorder (বাইরের থেকে দৃশ্যমান নয়) বলা হয়।
• এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৌলিক। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়াশীলতার সমস্যা হলে এই অক্ষমতা দেখা যায়।
শিখন প্রতিবন্ধকতার শ্রেণীবিভাগ (Classifications):
শিশুর শিখন প্রতিবন্ধকতা প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- 1. পঠনগত ক্ষমতা, 2. শিখনগত অক্ষমতা, 3. গাণিতিক অক্ষমতা, 4. মৌখিক অসামঞ্জসতা।

পঠনগত ক্ষমতা (Reading disability):

1. বিশেষ ধরনের শিখন অক্ষমতা হল Dyslexia.
2. পঠন ও ভাষাগত শিখন প্রতিবন্ধকতাই হলো Dyslexia.
3. প্রাথমিক স্তরে 2-8% শিশুর মধ্যে দেখা যায়।
4. এটি স্থায়ী অক্ষমতা, সারা জীবন ধরে চলে।

বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

1. শুদ্ধ বানান লেখার অক্ষমতা।
2. পূর্বে শেখা শব্দকে চিনতে না পারা।
3. সমধর্মী বর্ণগুলিকে সঠিকভাবে চিনতে না পারা (b-কে d, 6-কে 9 পড়া ইত্যাদি)।
4. শব্দের মধ্যে এক বা একাধিক বর্ণ বাদ দিয়ে পড়া যেমন- cart-কে cat পড়া।
5. বিশৃংখল ও ভুল পঠন।
6. দুর্বল স্মৃতিশক্তি।
7. উচ্চারণে ভুল।

কারণ(Reasons):

1. স্নায়ুতন্ত্রের দূর্বলতা।
2. আবেগ দ্বারা তাড়িত হলে।
3. দুর্বল চিন্তন, প্রেষণার অভাব ইত্যাদি।

শিক্ষা(Education):

1. এই ধরনের শিশুদের প্রথমে চিহ্নিতকরণ ও তাদের বোধগম্যতার ক্ষমতাকে উৎসাহদান।
2. শিখন সহায়ক প্রযুক্তিবিদ্যার ব্যবহার।
3. Feedback- এর ব্যবস্থা।
4. ছোটো ছোটো দলে ভাগ করে পাঠের অভ্যাস।
5. কোনো বিষয় পাঠ ও উত্তরদানের জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া।

লিখন দক্ষতা(Dysgraphia):

মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রিত স্নায়ু, অস্থি ও মাংসপেশির মধ্যে সার্থক সম্মানয়ের অভাবে লিখন অক্ষমতা দেখা যায়।

শিক্ষকের ভূমিকা:

1. লিখনে অক্ষম শিশুদের Word processor ব্যবহারে উৎসাহিত করা।
2. টেপরেকর্ডার ব্যবহারের অনুমতিদান।
3. রুলটানা কাগজ বা graph paper-এ লেখার অভ্যাস করানো।
4. কলমের পরিবর্তে পেনসিল বা স্কেচ পেন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া।
5. লিখিত পরীক্ষার চেয়ে মৌখিক পরীক্ষার ওপর অধিক গুরুত্বদান।

গাণিতিক অক্ষমতা(Dyscalculia):

গাণিতিক হিসাব ও চিন্তার ক্ষেত্রে জীবনের দীর্ঘ সময়ব্যাপী যে বিশৃঙ্খলা শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা যায় তাই হল Dyscalculia.

শিক্ষকের ভূমিকা:

1. এই ধরনের শিশুদের দুর্বলতা অনুসন্ধানের সাহায্য করা।
2. লেখচিত্রের ব্যবহার।
3. গাণিতিক সমস্যা সমাধানের ধারাপাত বা গুণন টেবিল ব্যবহার না করে বিভিন্ন প্রয়োগ পদ্ধতির ব্যবহার।
4. গাণিতিক সমস্যার সমাধানের জন্য নিয়মিত অনুশীলনে উৎসাহিতকরণ।
5. জীবন্ত ও উপযুক্ত উদাহরণের মাধ্যমে নতুন উদ্ভাবী দক্ষতার প্রয়োগ।
6. বুদ্ধির অভীক্ষা ও শিক্ষামূলক অভীক্ষা প্রয়োগ করে শিখন প্রতিবন্ধীদের চিহ্নিত করা হয়।
7. শিখন প্রতিবন্ধকতার পরিমাপ করা হয় মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসামূলক পদ্ধতিতে।

আরও পড়ুন:- বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে পার্থক্য 

আরও পড়ুন:- বৃদ্ধি ও বিকাশ  

Leave a comment