কোষ কাকে বলে? কোশের প্রকারভেদ ও প্রত্যেক প্রকারের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ?
সূচনা(Introduction):
এই বিশ্বে অসংখ্য প্রজাতির জীব বসবাস করে। তাদের মধ্যে কেউ এককোষী আবার কেউ বহু কোষী। জীব মাত্রই দেহ এক বা একাধিক কোষ দিয়ে গঠিত। কোশ জীবদের গঠনমূলক ও জৈবনিক ক্রিয়ামুলক একক। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে কোষ বিদ্যা বা সাইটোলজি (Cytology) নামক জীব বিজ্ঞানের একটি শাখা স্বীকৃতি লাভ করে।
১৫৯০ খ্রিস্টাব্দে হল্যান্ডের জ্যানসেন ভাতৃদ্বয় (চশমা বিক্রেতা) এফ.জ্যানসেন ও জেট.জ্যানসেন প্রথম অণুবীক্ষণিক যন্ত্র আবিষ্কার করার পর থেকেই কোশ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। ইংরেজ বাস্তুকার রবার্ট হুক নিজের তৈরি অণুবীক্ষণ যন্ত্রে প্রথম কোষ আবিষ্কার করেন।
কোষের সংজ্ঞা:
প্রভেদক ভেদ্য আবরণী বেষ্টিত প্রোটোপ্লাজম দিয়ে গঠিত স্বপ্রজননশীল জীবদেহের গঠনমূলক ও জৈবনিক ক্রিয়ামূলক এককে কোষ বলে।
উদাহরণ:-সমস্ত সজীব বস্তুই কোষ দ্বারা গঠিত।
ব্যতিক্রম:- স্তন্যপায়ী প্রাণীর পরিণত লোহিত কণিকায় নিউক্লিয়াস অনুপস্থিত।
• নিউক্লিয়াস নামকরণ করেন রবার্ট ব্রাউন।
• প্রোটোপ্লাজম নামকরণ করেন পারকিনজি।
• ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে স্লেইডেন ও শোয়ান কোশবাদ বা সেলথিয়োরি প্রবর্তন করেন।
প্রোটোবায়োটা বা অকোষীয় জীব এবং সাইটোবায়োটা বা কোষীয় জীবের সংজ্ঞা:
যে সকল জীবের দেহে সাইটোপ্লাজম অনুপস্থিত তাদের প্রোটোবায়োটা বা অকোষীয় বলে। যেমন-প্রিয়নখ ও ভাইরয়েড এবং যে সকল জীবের দেহ সাইটোপ্লাজম যুক্ত তাকে সাইটোবায়োটা বা কোষীয় জীব বলে। যেমন-সকল সজীব জীবই কোশীয়।
কোষের প্রকারভেদ:
নিউক্লিয়াসের সংগঠনের ওপর ভিত্তি করে কোষ তিন প্রকার। যথা- 1. আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষ বা প্রোক্যারিওটি কোষ, 2. মধ্য নিউক্লিয়াস যুক্ত কোষ বা মেসোকেরিওটিক কোশ, 3. আদর্শ নিউক্লিয়াস যুক্ত কোষ বা ইউক্যারিওটিক কোশ।
1. প্রোক্যারিওটিক কোষ:
যেসব কোষের নিউক্লিয়াসটিতে নিউক্লিওপর্দা, নিউক্লিওরস এবং ক্রোমোজোম থাকে না অর্থাৎ সুগঠিত নয় তাকে আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষ বা প্রোক্যারিওটিক কোষ বলে।
বৈশিষ্ট্য:
a) এইরকম কোষে আদর্শ নিউক্লিয়াস থাকে না।
b) কোষ পর্দা থাকে কিন্তু কোষ প্রাচীর কয়েকক্ষেত্রে থাকে।
c) এই কোষে ক্রোমোজোম গঠিত হয় না।
d) কোষের সেন্ট্রোমিয়ার থাকে না।
e) পোকার কোষের রাইবোজোম 70S প্রকৃতির।
f) এই প্রকার কোষে কোনো কোষ অঙ্গাণু থাকে না।
g) কোষে ভ্যাকুওল সৃষ্টি হয় না।
2. মেসোক্যারিওটিক কোষ:
যেসব কোশে নিউক্লিয়াসটি সুগঠিত অর্থাৎ নিউক্লিও পর্দা, নিউক্লিও রস এবং ক্রোমোজোম থাকে কিন্তু ক্রোমোজোম আম্লিক প্রোটিনযুক্ত তাকে মধ্য নিউক্লিয়াস বা মেসোকেরিওটিক কোশ বলে। যেমন- নকটিলিউকা
বৈশিষ্ট্য:
a) নিউক্লিয়াস সংঘটিত এবং আবরণী বেষ্টিত।
b) কোষ পর্দা থাকে কিন্তু কোষ প্রাচীর থাকে না।
c) ক্রোমোজোম থাকে যা কেবল আম্লিক প্রোটিন দিয়ে গঠিত।
d) সেন্ট্রোমিয়ার থাকে না।
e) রাইবোজোম 80S প্রকৃতির।
f) ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে এবং সালোকসংশ্লেষীয় রঞ্জক ক্লোরোপ্লাস্টের মধ্যে অবস্থান করে।
g) কোষের মধ্যে কোষ অঙ্গানু থাকে না।
3. ইউক্যারিওটিক কোষ:
যে সকল কোষে নিউক্লিয়ারটি সুগঠিত এবং ক্রোমোজোম ক্ষারীয় প্রোটিন যুক্ত ও কোষ বিভাজন মাইটোসিস বা মিয়োসিস পদ্ধতিতে ঘটে তাকে বলে আদর্শ নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষ বা ইউক্যারিওটিক কোষ।যেমন-সমস্ত উন্নত উদ্ভিদ ও প্রাণী।
বৈশিষ্ট্য:
a) এই প্রকার কোষের নিউক্লিয়াস টি সুগঠিত অর্থাৎ নিউক্লিয় পর্দা, নিউক্লিওলাস, নিউক্লিওপ্লাজম ও নিউক্লিয় জালক উপস্থিত।
b) কোষ পর্দা ও কোষ প্রাচীর উভয়ই বর্তমান। তবে কোষ প্রাচীর কেবলমাত্র উদ্ভিদ কোষে থাকে।
c) ক্রোমোজোম ঘটিত হয় ও তার ক্ষারীয় প্রোটিনযুক্ত।
d) ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার থাকে।
e) রাইবোজোম 80S প্রকৃতির হয়।
f) উদ্ভিদ কোষের ক্ষেত্রে ক্লোরোপ্লাস্ট এর মধ্যে সালোকসংশ্লেষীয় রঞ্জক থাকে।
g) এই প্রকার কোষে পর্দা করা কোষ অঙ্গানু। যেমন-মাইটোকনড্রিয়া, প্লাস্টিড, গলগি বস্তু, লাইসোজোম ইত্যাদি থাকে
h) উদ্ভিদ কোষে ভ্যাকুওল থাকে, প্রাণী কোষে সাধারণত থাকে না।